নুসরাত হত্যা: পুলিশের ভূমিকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায় টিআইবি

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ড ঘিরে পুলিশের ভূমিকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোরতম প্রয়োগ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপ্যারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2019, 04:24 PM
Updated : 18 April 2019, 04:28 PM

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কেবল এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারাই ‘যথেষ্ট নয়’।

“আমরা আশা করি তদন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে এবং দোষী ব্যক্তিরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে। কিন্তু এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও যোগসাজশের যে অভিযোগ উঠেছে তাতে আমরা আতঙ্কিত।”

ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে মামলা করেছিলেন আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি। অভিযোগ জানানোর সময় থানায় তার জবানবন্দির ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে তা ছড়িয়ে যায় ফেইসবুকে। 

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা ওই মামলা প্রত্যাহার না করায় গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা চলাকালে মাদ্রাসার একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় এই প্রতিবাদী তরুণীর।  

ওই ঘটনায় সোনাগাজীর পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রেও ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ আসে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।

সেই প্রসঙ্গ টেনে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “ওই পুলিশ কর্মকর্তা নুসরাতের অভিযোগ যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে আমলে তো নেননি, বরং অভিযোগটির সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

“এমনকি নুসরাতকে হাত পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পরও ওই পুলিশ কর্মকর্তা একে আত্মহত্যার চেষ্টা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।”

দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সমালোচিত ফেনীর সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে ইতোমধ্যে বদলি করা হয়েছে। আর নিয়ম বহির্ভূতভাবে জবানবন্দি ভিডিও করা এবং তা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

পুলিশ বাহিনী যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করলে দেশে ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে’- এমন শঙ্কা প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “প্রতিটা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা তথা সার্বিকভাবে পুলিশ প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এজন্য আমরা বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।”

পুলিশের নিজস্ব তদন্ত এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয় দাবি করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন,  “পুলিশ বাহিনী নিজেদের কতটা জনবান্ধব ও জনমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন সেটা তারা নিজেরাই ভেবে দেখতে পারেন। একজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে, অথচ এরই মধ্যে ফেনীর পুলিশ সুপার লিখিতভাবে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের পক্ষ নিয়েছেন। 

“সুতরাং পুলিশের এই তদন্ত কতটা কার্যকর হবে সে ব্যাপারে আমরা একেবারেই আশ্বস্ত হতে পারছি না। শুধু সংশ্লিষ্ট থানা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়াটা কোনো শাস্তি হতে পারে না। এ লক্ষ্যে অবিলম্বে বিচারবিভাগীয় তদন্তের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

সারাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা, সংখ্যা ও নৃশংসতার মাত্রা বিবেচনায় এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা ‘অকল্পনীয়’ বলে বর্ণনা করা হয় বিবৃতিতে।

এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হলে দায়ী ব্যক্তি ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোরতম প্রয়োগ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করে টিআইবি।