বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে খরচ ‘দুই কোটি টাকা’

হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙতে দুই কোটি টাকা খরচের একটি হিসাব কষেছে রাজউক; তাদের ধারণা, ১৫ তলা ওই ভবনের ধ্বংসাবশেষ বিক্রি করেই এই অর্থ উঠে আসবে।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2019, 06:13 PM
Updated : 21 Oct 2019, 02:03 PM

ধ্বংসাবশেষ বিক্রির টাকায় খরচ মেটাতে না পারলে বিজিএমইএর কাছ থেকে টাকা আদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

আদালতের রায়ে ভবন ধ্বংসের ব্যয় বিজিএমইএকে বহন করতে বলা হয়েছিল। তার উপর জোর দিচ্ছেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চাইছেন বিজিএমইএর বিদায়ী সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।

রাজধানীর হাতিরঝিলে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের গড়ে তোলা বিজিএমইএর অবৈধ ভবনটি ভাঙার রায় হয়েছে সর্বোচ্চ আদালত থেকে।

এরপর বিজিএমইএ ও ওই ভবনে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালামাল সরিয়ে নিতে বছরের বেশি সময় দেওয়ার পর মঙ্গলবার ভবনটি সিলগালা করে দিয়েছে রাজধানী ‍উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। 

উঁচু এই ভবনটি কীভাবে ভাঙবেন, ব্যয়ের সংস্থান কীভাবে হবে, এখন সেই ছক কষছেন রাজউক কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভবন ভাঙতে দুই কোটি টাকা লাগতে পারে।

“এই ভবন ভাঙতে কী পরিমাণ টাকা লাগতে পারে, তার একটা মোটামুটি অ্যাসেসমেন্ট করা হয়েছিল আগেই। দুই কোটি টাকার মতো লাগতে পারে। ভবনের মালামাল বিক্রি করে এই টাকাটা উঠে যাওয়ার কথা।”

দুটি বেইজমেন্টসহ ১৫ তলা বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার পর ব্যবহারযোগ্য মালামাল কেনায় আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান ইতোমধ্যেই করেছে রাজউক। আগ্রহীদের আগামী ২৪ এপ্রিল বিকাল ৪টার মধ্যে রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছে।

তিন মাসের মধ্যে ভবন ভাঙার শর্ত দেওয়া হয়েছে সেই বিজ্ঞপ্তিতে। এতে আরও বলা হয়েছে, আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বহুতল ভবন ভাঙার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তিন মাসের মধ্যে ভবন ভেঙে মালামাল অপসারণ করতে হবে। ভাঙার ব্যাপারে ক্রেতাকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

দরপত্রের শর্তে বলা আছে, ভবন ভাঙার জন্য আলাদা কোনো অর্থ দেওয়া হবে না। যারা ভবন ভাঙবেন তারাই মালামাল কেনার দরপত্র দাখিল করতে পারবেন। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ মূল্য উল্লেখ করবেন, তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে।

হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন এখন সিলগালা; মূল ফটকে ঝুলছে রাজউকের তালা। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর দেওয়া রায়ে আদালত ভবন ভাঙার টাকা বিজিএমইএর কাছ থেকে আদায় করতে বলেছিল রাজউককে।

ভবন ভাঙার বিষয়ে বিজিএমইএ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করেছে বলে মনে করেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, যিনি নিজেও সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী।

মন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আদালতের নির্দেশনায় রাজউক ভবন ভাঙার দায়িত্ব নিয়েছে। তবে যাবতীয় খরচ বিজিএমইএকেই দিতে হবে।

“আমরা আপাতত উদ্যোগ নিয়ে দক্ষ লোক দিয়ে ভবনটি ভাঙব। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে ভাঙার খরচসহ নানা বিষয় আমাদের প্রসেসের ভেতর থেকে অ্যাসেস করব। যদি দেখা যায়, আমাদের কোনো ঘাটতি থাকল, সেটা নিয়ে আমরা তাদের (বিজিএমইএ) নোটিস দেব।”

এই মুহূর্তে অবৈধ স্থাপনাটি উচ্ছেদ করাই ‘প্রথম ও প্রধান কাজ’ বলে উল্লেখ করেন রেজাউল করিম।

বিজিএমইএকে ভবন ভাঙার খরচ দিতেই হবে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও হাই কোর্টে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা প্রশ্নে মামলার অ্যামিকাস কিউরিয়া মনজিল মোরসেদ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতের রায়েই বলা আছে তাদের খরচ দিতে হবে। নির্দেশ তো আর চেঞ্জ হয় নাই।”

হাতিরঝিলের ভবন ছেড়ে উত্তরার নতুন ভবনে উঠে যাওয়া বিজিএমইএর বিদায়ী সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনো কথা হয়নি।

“সেটা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমরা বসব।”

আদালতের নির্দেশের বাইরে কিছু করার কী আছে- এই প্রশ্নে সিদ্দিকুর বলেন, “কোর্টের নির্দেশনার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা সেখান থেকে কার্যালয় সরিয়ে নিয়েছি। কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ীই সবকিছু হবে।”

বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সিদ্দিকুর বলেন, ভবন ভাঙার খরচের বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে।

“এখন যেহেতু রাজউক ভবন ভাঙার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে, খরচের বিষয়টা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হবে। যেহেতু আমরা ইপিবির কাছ থেকে জমিটা কিনে নিয়েছিলাম, খরচের আগে সেই বিষয়টিও আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।”

অবৈধভাবে গড়ে তোলা বিজিএমইএ ভবনকে হাতিরঝিল প্রকল্পের ক্যান্সার বলেছিল আদালত। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

ভবন নির্মাণে হাতিরঝিলে জমিটি সরকারের কাছ থেকে পেয়েছিল দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

সিদ্দিকুর দাবি করছেন, এই জমি দেওয়ার পেছনে ‘ভুল’ ছিল সরকারি সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি)।

তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ওই জায়গা সিলেক্ট করে দিয়েছে ইপিবি। বিনিময়ে ইপিবিকে ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল। ভুল আমাদের ছিল না, ভুল করেছে ইপিবি।”

ভবন ভাঙার ব্যয় বহনে বিজিএমইএর গড়িমসির বিষয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, “দেব না-  এমন কথা তো বলতেই পারে। তারা তো বলেছিলেন, ভবন ছাড়বেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তো আদালতের রায় মানতেই হয়।”

[এই প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক ফয়সাল আতিক]