তখনই বলেছিলাম খালের উপর ভবন তুলবেন না: শেখ হাসিনা

হাতিরঝিলে জলাশয়ের উপর বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করতে মানা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কিন্তু তার সে কথা শোনা হয়নি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2019, 12:33 PM
Updated : 3 April 2019, 02:29 PM

বুধবার বিজিএমইএর নতুন ভবন উদ্বোধনের সময় কারওয়ান বাজারের পুরনো ভবনটি তৈরিতে নিজের ভূমিকা তুলে ধরতে গিয়ে একথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

হাতিরঝিলে জলাশয় দখল করে গড়ে তোলা ১৬ তলা ভবন সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ভেঙে ফেলতে হচ্ছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পোদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএকে।

হাই কোর্ট রায়ে বলেছিল, “বিজিএমইএ ভবনটি সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো। এ ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট না করা হলে এটি শুধু হাতিরঝিল প্রকল্পই নয়, সমস্ত ঢাকা শহরকে সংক্রামিত করবে।”

ওই ভবনটি রাখতে না পারার পর এখন ঢাকার উত্তরায় ১১০ কাটা জমির উপর ১৩ তলা নতুন ভবন তৈরি করছে বিজিএমইএ; বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের উন্নতির লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে বিজিএমইএকে ভবন নির্মাণে জমি বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “ঠিক সোনারগাঁও হোটেলের সাথে মিল রেখেই ওখানে আমরা জায়গা দিয়েছিলাম। তখন কিন্তু একটা অনুরোধও ছিল, ওই জায়গাটায়ই করা। কোনোমতেই যেন খালের ভেতর না যায়। কিন্তু পাঁচ বছর অল্প সময়,  আমরা তা সম্পন্ন করে যেতে পারিনি।

“বিজিএমইএকে যখন ভবন নির্মাণের জায়গাটা দিই, আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে, আমি নিজেও ওখানে গিয়েছিলাম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার জন্য। তখন বারবার অনরোধ করেছিলাম আপনারা কিন্তু খালটা বন্ধ করবেন না। দুর্ভাগ্য হল, পরবর্তীতে দেখলাম ওখানে সেই বিল্ডিংটা করা হল খালের ভেতরেই। সেখানে একটা ব্রিজ তৈরি করে তার উপর দিয়ে যাতায়াত!

“জলাধারের এমনি আমাদের অভাব। এই ঢাকা শহরে যতগুলো জলাধার ছিল একে এক সবগুলো বন্ধ করে দেওয়া হলো। সেখানে নানা রকম বিল্ডিং করা হল।”

হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় নির্মিত বিজিএমইএর এই ভবন ভাঙতে হচ্ছে আদালতের রায়ে

দেশের উন্নতির লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের নানা সুবিধা দিয়ে গেলেও ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ হাসিল না করার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আমরা চাই না দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হোক। কারণ আমাদের গার্মেন্টস সারা পৃথিবীতে রপ্তানি হচ্ছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে।

“সেই সব বিবেচনা করেই দ্বিতীয়বার যখন সরকারে এলাম, তথন একটা জায়গার ব্যবস্থা করে দিলাম। সেখানে এখন একটা কমপ্লেক্স তেরি হচ্ছে। তারা (ব্যবসায়ী) টাকা-পয়সা ভালোই কামাই করে, কিন্ত জায়গা-জমি পয়সা দিয়ে কিনতে চান না। তা আমাদের দিতে হবে।”

বিএনপি আমলের সঙ্গে তুলনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “অন্তত আমি সরকারে আসার পর কোনো ব্যবসায়ী বলতে পারবে না তাদের কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা হওয়া ভবন করে সেখানে কিন্তু কোনো কমিশন খাওয়ার ব্যবস্থা করিনি।”

ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেওয়ার এই কাজটি দেশের জন্যই করছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে নিজের বিভিন্ন সফরে প্রতিনিধি দলে ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্ত করার কথাও বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “যখন বিদেশে যাই তখন ব্যবসায়ীদের নিয়ে যাই। যেসব দেশে আমাদের গার্মেন্টস রপ্তানি হয় তাদেরকে সব সময় আমার অনুরোধ থাকে, বায়াররা যেন দামটা একটু বাড়ায়। আবার শ্রমিকদের জন্যও আমরা কাজ করেছি।”

ভিডিও কনফারেন্সে বিজিএমইএ কমপ্লেক্স উদ্বোধনের সময় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতিরা। ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

তিনি বলেন, “আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে নির্দেশনাও দেওয়া আছে, ব্যবসা-বাণিজ্য কোন কোন জায়গায় আমরা সম্প্রসারণ করতে পারি, সেটা খুঁজে বের করা। সব রাষ্ট্রদূতকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কোন কোন দেশে কোন কোন পণ্যের চাহিদা বেশি, সেটা খুঁজে বের করা এবং যাতে সেই ধরনের পণ্য আমার দেশে উৎপাদন করতে পারি, রপ্তনি করতে পারি।”

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদেরও নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হবে। গার্মেন্টসেরই কিন্তু অনেক নতুন আইটেম তৈরি করা যায়। একেক দেশে একেক ধরনের গার্মেন্টসের চাহিদা রয়েছে। প্রচেষ্টা থাকবে নতুন বাজার খোঁজার চেষ্টা করার, তাহলে ব্যবসাটা আরও প্রসারিত হবে।”

ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এক সময় দেশে বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিল, মাত্র ১৬শ মেগাওয়াট ছিল। আমরা সরকারি-বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দেওয়ার উদ্যোগ নিলাম, যাতে শিল্প- কলকারখানা গড়ে উঠতে পারে। তার জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা আমরা করলাম।

“গার্মেন্টস শিল্পের শুরুতে সমস্যা ছিল, তাদের বিদ্যুৎ ছিল না। তাদের জন্য আমি জেনারেটরের উপর থেকে সব ধরনের ট্যাক্স প্রত্যাহার করে নিলাম। সেই সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নিলাম। এভাবে সর্বক্ষেত্রেই আমরা উন্নয়নের একটা পরিকল্পনা নিই।”

উত্তরায় ১১০ কাঠা জমিতে হচ্ছে এখন ১৩ তলাবিশিষ্ট বিজিএমইএ কমপ্লেক্স

বিজিএমএইএর নতুন ভবন নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এখানে একটা ভালো ডিসপ্লে সেন্টার হবে। কে কী তৈরি করে, বায়াররা আসলে সেটা দেখতে পারবে এবং সুন্দর একটা পরিবেশ থাকবে। তাদের মধ্যে যেন একটা বিশ্বাস তৈরি হয়, সেটা বিবেচনায় নিয়েই ভবনের ডিজাইনটা তৈরি হবে।”

বিজেএমইএ কমপ্লেক্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিজিএমইএর সাবেক তিন সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী এমপি, আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ ও ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম।

উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্স থেকে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন সংগঠনের বর্তমান সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, রুবানা হকসহ শিল্পোদ্যোক্তারা।