সচিবালয়ে বুধবার নিজের দপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী জানান, ভবনটি ভাঙতে ইতোমধ্যে টেন্ডার ডাকা হয়েছে। ২৪ এপ্রিলের মধ্যে দরপত্র জমা দিতে হবে আর ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বাছাই করা হবে ঠিকাদার। উপযুক্ত দেশীয় প্রতিষ্ঠান না পেলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকেই ভবনটি ভাঙার দায়িত্ব দেওয়া হবে।
“হাতিরঝিলের মাঝখানে বিষফোঁড়ার মত বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি, ফলে অনাকাঙ্খিতভাবে ভবনটি সেখানে বেড়ে উঠেছে। এই ব্যর্থতার দায় আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেকেরেই রয়েছে।”
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে এবং উন্মুক্ত স্থান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ ভঙ্গ করে বেগুনবাড়ি খালের একাংশ ভরাট করে গড়ে তোলা হয় ১৫ তলা বিজিএমইএ ভবন। ২০০৬ সালে সেই নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
জলাশয়ের উপর আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা এই ভবনকে হাতিরঝিলের প্রকল্পের ‘ক্যান্সার’ আখ্যায়িত করে হাই কোর্ট ২০১১ সালে এক রায়ে ইমারতটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। পরে আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে।
সর্বোচ্চ আদালত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার রায় দেওয়ার পর কয়েক দফায় সময় নিয়েছিলেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। সবশেষ আদালতের দেওয়া সাত মাস সময় শেষ হলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক মঙ্গলবার ভবনটি খালি করে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
মন্ত্রী জানান, ইতোমধ্যে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ভবনটি ভাঙার জন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অভিজ্ঞদের ২৪ এপ্রিলের মধ্যে কোটেশন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
“আমরা আইনগত পদ্ধতি অনুসরণের স্বার্থেই বিভিন্ন আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের কাছে টেন্ডার আহ্বান করেছি। ২৪ তারিখের ভেতরে টেন্ডার পেয়ে ২৫ এপ্রিলের মধ্যেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব কোন সংস্থা উপযুক্ত যাদেরকে দিয়ে এটা ভাঙা সম্ভব হবে।
“আমরা যদি উপযুক্ত সংস্থা পাই, তাহলে তাদের সমন্বয়ে, আর যদি উপযুক্ত সংস্থা না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা রাজউকের পক্ষ থেকে এই বিল্ডিং উচ্ছেদের জন্য যে প্রক্রিয়া দরকার সে প্রক্রিয়ায় যাব।”
রেজাউল করিম বলেন, উপযুক্ত ঠিকাদার পাওয়া না গেলে সরকারের তরফ থেকেই ভবনটি ভাঙার ব্যবস্থা করা হবে।
“ভাঙার ক্ষেত্রে দায়দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে, কারণ আমরা চাই রাষ্ট্রের চমৎকার একটি স্থাপনার মাঝখানে বেআইনি ওই ভবন টিকে না থাকুক।”
পূর্তমন্ত্রী বলেন, যারা টেন্ডারে অংশ নেবে তাদের মধ্যে ‘আধুনিক প্রযুক্তি’ ব্যবহারে অভিজ্ঞ কেউ আছে কি না সেটা আমরা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আসা হবে।
“আমরা অগ্রাধিকার দিতে চাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে। যদি সে রকম না পাই, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। কোনোভাবেই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে না, জীবন এবং মালের ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে এই ভবন ভাঙা হবে না।”
র্যাংগস প্লাজা ভাঙার সময় প্রাণহানির কথা মনে করিয়ে দিয়ে পূর্তমন্ত্রী বলেন, “এবারে আমাদের প্রস্তুতি বিজ্ঞান সম্মত, প্রযুক্তি সম্মত হবে, যাতে এই ভবনটি ভাঙতে গিয়ে কোনোভাবে প্রাণহানি অথবা কোনো রকমের অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতির মুখোমুখি না হই।”
ভবনটি ভাঙতে ডিনামাইট ব্যবহার এবং সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে কি না- এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “সিভিল প্রশাসন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণায় এবং রাজউকই যথেষ্ট। আমরা এলাকার নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়ের স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ অনেকের সাহায্য নিতে পারি। কিন্তু ইমারতটি ভেঙে ফেলতে বাইরের অন্য কোনো সংস্থার প্রয়োজন হবে না।”
তিনি বলেন, ভবনটি ভাঙার জন্য যে পদ্ধতির কথা পত্র-পত্রিকায় লেখা হয়েছে, তা ‘সঠিকভাবে আসেনি’। ডিনামাইট ব্যবহারের যে কথা বলা হয়েছে, তা ‘বোমা মেরে বিল্ডিং ভেঙে ফেলার’ মত কোনো বিষয় নয়।
“এটা ইমারত ভেঙে ফেলার একটা কৌশল। এটা প্রযুক্তি, কোনোভাবেই সেটা প্রচলিত অর্থে যে ডিনামাইট বোমা- সেটা নয়।”
২৪ এপ্রিলের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংবাদিকদের সামনে প্রকাশ করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আধুনিক প্রযুক্তিতে এমনসব কৌশল সৃষ্টি করা হয়েছে যে ভবনটি ভাঙতে বেশি সময় লাগবে না, এক ঘণ্টার ভেতরে স্তূপ আকারে ওই জায়গায় বসে পড়বে।”
তিনি বলেন, পুরো ভবন ভেঙে স্তূপ সরিয়ে ফেলাসহ সব কাজ সেরে তিন মাসের মধ্যে জায়গাটা পরিষ্কার করে ফেলা হবে।
“কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যে যেখানে বেআইনি ইমারত বা স্থাপনা নির্মাণ করবেন তাদের সকলকেই আমরা আইনের আওতায় আনতে চাই, যাতে কেউ বলতে না পারে- ‘আমি ইমারত নির্মাণ করে ফেলেছি এখন আর কিছু করার নেই’। আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই পদক্ষেপ নিতে চাই।”