বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে অষ্টম থেকে একাদশ তলা পর্যন্ত চারটি ফ্লোরের প্রায় সবকিছু ভস্মীভূত হয়েছে।
Published : 29 Mar 2019, 09:24 PM
তবে অন্যান্য ফ্লোরের অধিকাংশ মালামাল অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে ওই ভবনের বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ২৩ তলা এফআর টাওয়ারে আগুন লেগে বৃহস্পতিবার ২৫ জনের মৃত্যু হয়। বাণিজ্যিক ওই ভবনের পুরোটা জুড়েই ছিল বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অফিস, রোস্তারাঁ ও কনভেনশন সেন্টার।
অগ্নি নির্বাপন ও তল্লাশি শেষ তরে শুক্রবার দুপুরে ভবনের দায়িত্ব পুলিশের কাছে বুঝিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস। এরপর সন্ধ্যায় ওই ভবনে থাকা বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে পুরো ভবন ঘুরে দেখেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের বলেন, “ফায়ার সার্ভিস ভবনটি পুলিশের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে। ডিসি নর্থ ও ডিএমপির উদ্যোগে ভবনের সবগুলো ফ্লোরে পুলিশ ও বিভিন্ন ফ্লোরের প্রতিনিধিরা গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে এসেছেন। প্রায় ২২০ জন লোক পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ফ্লোরে গেছেন।
“অনেকে দাবি করছে টাকা ছিল, মূল্যবান কাগজপত্র ছিল। একজন ৫ লাখ টাকা থাকার দাবি করেছিল। তিনি সেই টাকা বুঝে পেয়েছেন। অনেকের ল্যাপটপ ছিল, সেগুলো বুঝে পেয়েছেন। একেকটি দল শুধু একেকটি তলায় পরিদর্শনের সুযোগ পেয়েছেন। কাউকে একাধিক ফ্লোরে যেতে দেওয়া হয়নি।”
কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ৩২ নম্বর হোল্ডিংয়ে ওই জমির মূল মালিক ছিলেন এস এম এইচ আই ফারুক নামের একজন প্রকৌশলী। ওই জমিতে ২০০৫ সালে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে রূপায়ন গ্রুপ। দুই বছর পর ভবনটি চালু হয়।
আধাআধি মালিকানা হওয়ায় ভবনটির নাম তখন দেওয়া হয় ফারুক-রূপায়ন টাওয়ার; সংক্ষেপে এফআর টাওয়ার।
রূপায়ন পরে তাদের মালিকানায় থাকা বিভিন্ন ইউনিট বিক্রি করে দেয়। সব মিলিয়ে ২৩ তলা ওই ভবনের সবগুলো ইউনিটের মালিক এখন ফারুকসহ মোট ২৪ জন। বিভিন্ন ফ্লোর তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়েছেন।
ছয় হাজার বর্গফুটের প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে চারটি করে ইউনিট। প্রথম দুই তলা ভাড়া দেওয়া হয়েছে দোকান হিসেবে। তৃতীয় তলায় রয়েছে রোজডেল ব্যানকুয়েট হল নামের একটি কনভেনশন সেন্টার।
ডার্ড গ্রুপের কর্মকর্তা কামাল হোসেন শামীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভবনের ৩, ১৩, ১৪, ১৭ ও ২০ তলায় তাদের কোম্পানির অফিস। সেসব ফ্লোরে আগুনে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে অষ্টম থেকে একাদশ ফ্লোরে ‘কিছুই আর অবশিষ্ট নেই’।
এর মধ্যে অষ্টম তলায় টেক্সটাইল কোম্পানি স্পেক্ট্রা এসএন টেক্স, নবম তলায় এমপায়ার গ্রুপ, দশম তলায় আমরা টেকনোলজিস এবং একাদশ তালায় স্ক্যানওয়েল লজিস্টিকস, হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস ও আলপি ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেইট ফরোয়ার্ডসের অফিস ছিল।
দ্বাদশ তলায় ইউরো গ্রুপের ট্র্যাভেল এজেন্সি ইইউআর সার্ভিসেসের অফিসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে এয়ার ডিভিশনের প্রধান রাফিউল ইসলাম মারুফ জানান।
তিনি বলেন, “আমাদের অফিসে ৩৮ জন কর্মরত ছিল। আমি ছিলাম এয়ারপোর্টে। খবর পেয়ে এসে দেখি ভবনে আগুন। পরে আগুন নিভলে ভেতরে ঢুকে দেখি অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
মেয়র আতিকুল বলেন, ভবনটি এখন কি অবস্থায় আছে তা জানার জন্য বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের খবর দেওয়া হয়েছে। তারা শনিবার এসে ভবনটি দেখবে। তারপর পরবর্তী করনীয় ঠিক করা হবে।
আর রাস্তায় মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে জাল টানিয়ে দেওয়া হবে, যাতে ভেঙে ঝুলতে থাকা কাচ নিচে পড়ে আরও দুর্ঘটনার কারণ না ঘটায়।