নিরাপত্তার জন্য বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা নিরসনে জোর

নিরাপদ সমাজ নিশ্চিত করতে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা নিরসন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2018, 01:27 PM
Updated : 18 August 2018, 01:37 PM

শনিবার ঢাকায় আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন জোট আয়োজিত ‘নারীদের জন্য বিচারব্যবস্থা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।

কাজী রিয়াজুল হক বলেন, “আমাদের দেশে যতদিন না আমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারবো, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে পারব, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা থেকে বের হয়ে আসতে পারব, মানুষ ততোদিন পর্যন্ত নিরাপদ হবে না।”

বিচারকার্যের সঙ্গে জড়িত সবার মানসিক পরিবর্তনের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “বিচার প্রক্রিয়ায় নারীদের প্রতি যে হয়রানি হয়, সেটা একটি বড় ধরণের যৌন হয়রানি। আদালতে যেভাবে তাকে হাকিমের ‍উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তা তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। একারণে অনেকে বিচারের জন্য যেতে চায় না।”

সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে নারীর প্রতি সকল সহিংসতা বন্ধ করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ২০১৬ সালের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিশা হত্যা মামলা ও ২০১৭ সালে টাঙ্গাইলে ছোঁয়া পরিবহনের বাসে রূপা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচারকার্যের পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মাত্র ১৪ কার্যদিবসে নিম্ন আদালতে দ্রুত সময়ে রুপার মামলাটি নিষ্পত্তি হলেও ৭২৩ দিনেও রিশার মামলার কোন বিচার হয়নি। শিশু আইনের ১৭ (১) ধারার সীমাবদ্ধতার কারণে শিশু রিশার মামলার কালক্ষেপণ হচ্ছে, মামলা ঝুলে আছে। আবার রূপা হত্যা মামলা উচ্চ আদালতে ৭-৮ মাস পেরিয়ে গেলেও কোন অগ্রগতি হয়নি এমনকি কোন শুনানির তারিখও পড়েনি।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, “রূপা ও রিশার মামলায় অপরাধী তেমন প্রভাবশালী নয় তবুও বিচারকার্যে ধীর গতি ও দীর্ঘসূত্রতা।”

সাংবাদিকদের আরো দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “পুলিশের উপর ভরসা না করে সাংবাদিকদের নিজেদেরই অনুসন্ধান করে রিপোর্ট তৈরি করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ডেপুটি কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, “পুলিশ নির্ধারিত সময়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়ে আদালতে পাঠায় কিন্তু আসামি জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়।”

শুধু পুলিশকে অভিযুক্ত না করে সকলে মিলে এক সাথে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

পরিবেশ আদালতের বিচারক মো. শওকত হোসেন বলেন, “দ্রুত মামলার বিচার হতে হলে অন্তত ৫০০ আদালত দরকার। আমাদের বিচারব্যবস্থার জন্য যে বাজেট দেওয়া হয়েছে, তা অপ্রতুল। বিচারব্যবস্থার জন্য বাজেট বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।”

আমরাই পারি জোটের নির্বাহী সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক বিভিন্ন মামলার ক্ষেত্রে তাদের পর‌্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “বিভিন্ন মামলা পর‌্যবেক্ষণ করে আমরা দেখেছি এজাহার লেখা থেকে তদন্ত, তদন্ত রিপোর্ট থেকে আদালতে বিচারের জন্য ধরণা দেয়া- প্রতিটি পর্যায়ে নারীদের হয়রানির শিকার হতে হয়। পুলিশি ব্যবস্থা, আইনজীবীদের মানসিকতা, মেডিকেল টেস্ট, বিচারিক প্রক্রিয়ার বাঁধা পেরিয়ে ন্যায্য বিচার পাওয়া নারীর জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে।”

আমরাই পারি জোটের জাতীয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফরিদা ইয়াসমিন ও নারীপক্ষের সদস্য রওশন আরা।