বিক্ষোভ-সংঘাত আর ধর্মঘট পেরিয়ে আপন ছন্দে ঢাকা

নিরাপদ সড়কের দাবিতে টানা নয় দিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সংঘাত এবং তার পাল্টায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটের অবসান ঘটার পর স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে এসেছে রাজধানী শহর ঢাকা।

মাসুম বিল্লাহ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2018, 06:29 PM
Updated : 8 August 2018, 10:28 AM

আগের দিন বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ-সংঘাতের পর মঙ্গলবার নগরীর কোনো সড়কে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কিংবা অবস্থান ছিল না। তবে ট্রাফিক সপ্তাহ চলার মধ্যে গণপরিবহন কমে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে।

গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীম ও আবদুল করিম রাজীবের মৃত্যু হলে তাদের সহপাঠীরা সেদিনই বিক্ষোভে নেমেছিল।

এই দুর্ঘটনা নিয়ে নৌমন্ত্রী ও পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খানের হাসিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সারা ঢাকার শিক্ষার্থীরা; তাদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।

আন্দোলনের মধ্যে ওঠে নয় দফা দাবি; সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা অবতীর্ণ হয় পুলিশের ভূমিকায়; শুরু করে চালকের লাইসেন্স ও যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা। যাতে ধরা পড়ে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও আইন প্রণেতারাও অনেক ক্ষেত্রে আইন মানছেন না।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে নৌমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেন; সরকারও নয় দফা মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। তারপরও সড়কে শিক্ষার্থীরা থাকার পর বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা হয়, শুরু হয় সহিংসতা। আন্দোলন নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যও আসতে থাকে। 

এরপর সরকার কঠোর হওয়ার বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পায়। প্রস্তাবিত আইনটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সন্তুষ্টি দেখা না গেলেও সড়ক তাদের অবস্থান না নেওয়ার পর  গণপরিবহন চলাচলও শুরু হয়।

স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী এই আন্দোলনের ঘটনাক্রম

২৯ জুলাই

ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে রোববার বাসচাপায় দুই ছাত্রের মৃত্যুর খবরে রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাংচুর করেন শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

দুই সহপাঠির মৃত্যুর পর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা বিমানবন্দর সড়কে বেশ কিছু যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকার পর পুলিশ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে নেয়।

দুই শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে নৌ পরিহনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খানের বক্তব্য ও হাসি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।

তাদের মৃত্যু নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে শাজাহান খান বলেন, “আমি যদি আপনাদেরকে প্রশ্ন করি, গতকাল আপনারা লক্ষ্য করেছেন, ভারতের মহারাষ্ট্রে একটা গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে ৩৩ জন মারা গেল। এখন সেখানে কি আমরা যেভাবে এগুলোকে নিয়ে কথা বলি, এগুলো কি ওখানে কথা বলে “

এরপরেও একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলে শাজাহান খান বলেন, “আপনি কি জানেন যে ভারতে প্রতি ঘণ্টায় সড়ক দুর্ঘটনায় কতজন মারা যায়? ১৬ জন মারা যায়, আপনাদের রিপোর্ট থেকেই জানলাম।”

৩০ জুলাই

বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ঢাকার বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে দুই বাসচালক ও দুই সহকারীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। জাবালে নূর পরিবহনের যে বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে, সেই বাসের চালক মাসুম বিল্লাহ ও চালকের সহকারী এনায়েতের সঙ্গে চারজন ছিলেন ওই আটককৃতদের মধ্যে।

নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে এক সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা করে তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। জাবালে নূর পরিবহন কর্তৃপক্ষকে এই ক্ষতিপূরণ পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়াও এ দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে জাবালে নূর পরিবহনকে চিকিৎসা ব্যয় বহন করারও নির্দেশ দেয় আদালত।

শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থীরা বিমানবন্দর সড়কে নামার পর ধানমণ্ডিতে কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরাও সড়কে নেমে বিক্ষোভ দেখায়।

সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় শাজাহান খান বলেন, “দুর্ঘটনা ঘটলেই অনেকে আমার পদত্যাগ দাবি করেন। আমি তাদের অনুরোধ করব এবং বলব, আপনারা যদি বলতে পারেন হ্যাঁ, আপনি গেলেই সব সমস্যা সমাধান হবে, আমার যেতে তো কোনো অসুবিধা নেই।”

৩১ জুলাই

শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবি তুলেছিল, যা মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার

নৌমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে তৃতীয় দিনে আন্দোলন বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর চালিয়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

তাদের এই বিক্ষোভে ঢাকার ফার্মগেইট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, মতিঝিল, কাকরাইল ও বাড্ডায় দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে, চলতি পথের যাত্রীদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে। এর মধ্যে সায়েন্স লাবরেটরি মোড় প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে অন্তত ২০টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়।

রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা র‌্যাডিসন হোটেলের সামনের রাস্তার একপাশে অবস্থান নিয়ে আধা ঘণ্টা বিক্ষোভ করে।

তেজগাঁও কলেজ ও সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা ফার্মগেইটের বাবুল টাওয়ারের সামনে অবস্থান নেয়।

সেখানে তাদের বিক্ষোভের কারণে প্রায় দেড় ঘণ্টা ফার্মগেইট মোড় হয়ে রাজধানীর মিরপুর, গাবতলী, কারওয়ান বাজার ও বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে নিলে যান চলাচল শুরু হয়।

ফার্মগেইট থেকে সরে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা শাহবাগের দিকে রওনা হয়। তবে রূপসী বাংলা মোড়ে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। এদিকে ফার্মগেইট খোলার আগেই সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় ও মিরপুর সনি সিনেমা হলের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের খবর আসে।

ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে একটি বাস ভাংচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কাকরাইল মোড়ে রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ শুরু করে এবং একটি বাসে ভাংচুর চালায়।

কাকরাইলের পরিস্থিতি শান্ত হতে না হতেই নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামে। বেলা সোয়া ১টার দিকে প্রথমে নিজেদের কলেজের সামনের রস্তায় নেমে তারা যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে শাপলা চত্বরে গিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।

দোষী চালকদের গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করার আশ্বাস দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা বিকাল ৩টার দিকে শাপলা চত্বর ত্যাগ করে। কিন্তু তারা চলে যাওয়ার সময় কমলাপুরের দিকে এক ছাত্র মারধরের শিকার হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে আবার উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এদিন সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যানবাহনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ফিটনেস জরিপে একটি জাতীয় নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

এদিকে বিক্ষোভের মধ্যে সড়ক থেকে বাস সরিয়ে নেন পরিবহন মালিকরা। এর ফলে সড়ক আটকে থাকায় যেমন রাজধানীবাসীর চলাচল যেমন আটকে যায়; তেমনি গণপরিবহন না পেয়েও ভোগান্তি পোহাতে হয়।

দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিয়ে কথা বলার সময় ‘নিজের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের জন্য’ দুঃখ প্রকাশ করেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। তার ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ ক্ষমাসুন্দরভাবে দেখতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

১ অগাস্ট

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। ক্লাস বন্ধ রেখে ব্যাগ কাঁধে ইউনিফর্ম পরে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে অচল হয়ে যায় রাজধানীর রাজপথ। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে।

ঢাকায় আন্দোলনরত ছাত্ররা পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে গাড়ি থামিয়ে চালকদের লাইসেন্স দেখতে থাকে পুলিশের সামনেই। লাইসেন্স দেখাতে না পারলে গাড়ির চাবি আটকে রাখে তারা।

বাংলামোটরে উল্টো পথ দিয়ে যাওয়ার সময় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের গাড়ি শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে।

শনির আখড়ায় শিক্ষার্থীদের এড়াতে উল্টোপথ দিয়ে দ্রুত গতিতে যাওয়া একটি পিকআপ এক আন্দোলনকারীকে ধাক্কা দিয়ে যায়। পায়ে আঘাত নিয়ে ওই কলেজছাত্র এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

শিক্ষার্থীদের পাল্টায় নারায়ণগঞ্জে পরিবহন শ্রমিকরাও সকাল থেকে ছয় ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আটকে রেখে বিক্ষোভ করে। সেখানে রাস্তায় স্কুলছাত্রদের মারধর করার ঘটনাও ঘটে।

সকাল ১০টার পর থেকে নগরীর উত্তরাংশের উত্তরা থেকে দক্ষিণ প্রান্তের শনির আখড়া পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলে।

সমালোচনার মুখে থাকা নৌমন্ত্রী শাজাহান খান নিহত দিয়া খানম মিমের বাসায় গিয়ে তার পরিবারকে সান্ত্বনা জানান।

এর মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। মন্ত্রীর আহ্বানে কাজ না হলেও বিকাল ৪টার পর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বাসায় পাঠানোর কাজটি করে দেয় বৃষ্টি। তবে পরদিন ঢাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

২ অগাস্ট

পুলিশের গাড়ির চালকের লাইসেন্স না পেয়ে ঢাকার মগবাজার মোড়ে গাড়িটিকে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও বৃষ্টির মধ্যে স্কুল-কলেজের ইউনিফর্ম পরেই রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর অন্তত ২০টি পয়েন্টে তাদের বিক্ষোভের ফলে বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। বিক্ষোভের মধ্যে গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় পরিবহন মালিকরাও সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়।

এদিন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথের গাড়ি শিক্ষার্থীদের কাছে আটকে যায়। পুলিশ, বিজিবি, আইনপ্রণেতা, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ অনেকেই ‘ফেল করেন’ সেই পরীক্ষায়। এই পরিস্থিতিতে সরকারি গাড়ি চালকদের যাবতীয় মূল কাগজপত্র সঙ্গে রাখার নির্দেশ দেয় সরকার।

এদিন নিহত দিয়া ও করিমের পরিবারের সদস্যরা দেখা করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি পরিবারকে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র অনুদান দেন।

সব স্কুলের সামনে স্পিড ব্রেকার স্থাপন, সব স্কুলের সামনে প্ল্যাকার্ডধারী বিশেষ ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন, শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন বিমানবন্দর সড়কে আন্ডারপাস নির্মাণ এবং ওই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য পাঁচটি বাস দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হয় পুলিশ। এসময় পুলিশের সঙ্গে লাঠিহাতে একদল যুবককেও দেখা যায়।

বিকালে মিরপুরে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁধে। একদল যুবককেও লাঠি হাতে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হতে দেখা যায়, যারা ছাত্রলীগের বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করে।

সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দাবি করেন, শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সচেষ্ট।

আন্দোলনকারীদের সব দাবি পূরণে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে তাদের এখন ঘরে ফেরার অনুরোধ জানান তিনি।

৩ অগাস্ট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়েরবাগ এলাকায় সড়কে নেমে গাড়ি চলাচল আটকে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

দাবি মেনে নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ঘরে ফেরার আহ্বান জানানোর পরও টানা ষষ্ঠ দিনের মতো রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। আগের মতো ব্যাপক আকারে না হলেও মিরপুর, শাহবাগ, আসাদ গেইট, রায়েরবাগ এলাকায় সড়কে শিক্ষার্থীদের দেখা যায়।

৪ অগাস্ট

নিরাপদ সড়কের দাবিতে সড়কে থাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শনিবার ধানমণ্ডির জিগাতলায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আহত একজন ।

সপ্তম দিনেও রাজধানীর রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা; বিভিন্ন স্থানে তাদের উপর হামলার খবরও আসতে থাকে।

দুপুরে শাহবাগে গিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতারা সংহতি প্রকাশ করেন। তবে ঝিগাতলা, ফার্মগেইট, মিরপুরে তাদের উপর ছাত্রলীগ নামধারীরা হামলা চালায় বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ।

দুপুরে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে আটকে রাখা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে সৃষ্টি হয় উত্তেজনা।

শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিকে এগোলে হেলমেট পরা একদল যুবকের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া বিকাল পর্যন্ত চলে। সেখানে সংঘর্ষে অর্ধশতের মতো আহত হয়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে একদল দুর্বৃত্ত পরিকল্পিত হামলা চালায়।

৫ অগাস্ট

রোববার দুপুরে ঢাকার ধানমণ্ডিতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপরে হামলার সময় পুলিশের সামনেই বেধড়ক পেটানো হয় ফ্রিল্যান্স ফটো সাংবাদিক রাহাত করিমকে।

অষ্টম দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধানমণ্ডিতে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত দফায় দফায় এই সংঘর্ষ চলার মধ্যে হেলমেট পরা একদল যুবক লাঠি ও কিরিচ নিয়ে হামলা চালায় কর্তব্যরত সাংবাদিকদের উপর। সংঘর্ষ ও হামলায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আহত হন।

বিভিন্ন স্থানে মহড়া দেখা যায় ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের।

রামপুরায় বাঁধে সংঘাত। উত্তরায়ও ছিল উত্তেজনা।

৬ অগাস্ট

নবম দিনে রাজধানীতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে দেখা না গেলেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের কঠোর অবস্থানের মধ্যে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় দুই দিন এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এক দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে বেলা পৌনে ১১টা থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে।

ইস্ট ওয়েস্টের পাশাপাশি বসুন্ধরার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (আইইউবি) ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) শিক্ষার্থী এবং শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীদের কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ।

আর তেজগাঁওয়ের আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের পর পুলিশ ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীদের একজন একজন করে বের হতে বললে অনেকে ভেতরে আটকা পড়েন, তৈরি হয় আতঙ্ক। এসব ঘটনায় সংবাদকর্মী, পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

আন্দোলনের মুখে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রেখে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় সরকার।

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য দায়ী চালকের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওই আন্দোলনের মধ্যে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সম্পূরক এজেন্ডা’ হিসেবে এ আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে এই আইনে যাই থাকুক না কেন, মোটরযান চালনাজনিত কোনো দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে কোনো ব্যক্তি আহত বা প্রাণহানি ঘটলে তা ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩০৪ ধারা অনুযায়ী অপরাধ বলে গণ্য হবে।