পুলিশ ‘দায়িত্ব নিচ্ছে’, ঘরে ফেরার আহ্বান শিক্ষার্থীদের

নিরাপদ সড়কের আন্দোলন থেকে ‘সাহস’ নিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ ‘কঠোর’ হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষার্থীদের এখন ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2018, 10:47 AM
Updated : 4 August 2018, 02:17 PM

ঢাকার সড়কে সপ্তম দিনের মতো অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষার মধ্যে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান তিনি।

আছাদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ রোববার থেকে সারা বাংলাদেশে ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করবে।

“ট্রাফিক সপ্তাহে লাইন্সেস ছাড়া ফিটনেসবিহীন গাড়ি, হেল্পার দিয়ে ড্রাইভিংসহ ট্রাফিক আইনের যে কোনো ব্যত্যয় হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা। একইসঙ্গে মোটর সাইকেলে তিনজন চড়া, ট্রাফিক সিগন্যাল ভায়োলেশন করা, উল্টো পথে চলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা; সড়কে চালকের ও গাড়ির ‘লাইসেন্স পরীক্ষায়’ পুলিশের কাজে নেমে যায় তারা। তাদের ‘পরীক্ষায়’ অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়াও মন্ত্রী-এমপিরাও আটকা পড়েন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা স্বীকার করে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের নয়টি দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও তারা রাজপথ ছাড়েনি।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “সাধারণ ছাত্রদের আমরা স্যালুট করি। যে কাজটি আমাদের আরও আগে করার কথা ছিল, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে আমরা তা পারিনি। আজকে শিক্ষার্থীরা আমাদের নৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

“শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতিপক্ষ নয়, তারা আমাদের পরিপূরক। ভবিষ্যতে অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করে ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন করতে আমরা নৈতিক ভিত্তি পেয়েছি, আইন প্রয়োগ করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সাহস পেয়েছি।”

ট্রাফিক আইন যুগোপযোগী করার জন্য  ‘গণপরিবহন ও ট্রাফিক আইন’ নামে নতুন একটি আইন সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে হবে বলেও শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে শনিবার সকালে যানবাহনের চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষায় রাজধানীর যাত্রবাড়িতে পুলিশের তৎপরতা

শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে নাশকতা ঘটার শঙ্কা প্রকাশ করে এখন তাদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানান ঢাকার পুলিশ কমিশনার।

তিনি বলেন, “এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে, হীন ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহারের জন্য নানা অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আন্দোলনকে পলিটিসাইজ করার জন্য নানা অপচেষ্টা চলছে, যার ফলে আমরা এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।”

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বেশে ‘স্বার্থান্বেষী মহল’ আন্দোলনে ঢুকে নানা ধরনের ‘অন্তর্ঘাতমূলক অপচেষ্টা’ চালাতে সক্রিয় বলে তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, “গোয়েন্দা সূত্রে আমরা প্রমাণ পেয়েছি, স্কুল ড্রেস বিক্রি ও তৈরির হিড়িক পড়েছে। স্বার্থান্বেষী মহল ছাত্রদের মধ্যে ঢুকে পড়ে নিরাপদ সড়কের আন্দোলনকে অন্য খাতে প্রবাহিত করে ঘোলা জলে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।”

নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের প্ল্যাকার্ডে, ফেইসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় পুলিশকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যেরও সমালোচনা করেন আছাদুজ্জামান মিয়া।

তিনি বলেন, “এতে পুলিশকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চলছে।”

২০১২-১৩ সালে বাসে আগুনের ঘটনায় পুলিশ যেসব আইনি পদক্ষেপ নিয়েছিল, সেসব ছবি শেয়ার করে এখন পুলিশকে ঘিরে ‘উদ্দেশ্যমূলক ও ভিত্তিহীন’ অপপ্রচার চলছে বলেও জানান তিনি।

আছাদুজ্জামান বলেন, “পুলিশ বিনয়ের সাথে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করে আছে। যে কোনো উস্কানি ও দুরভিসন্ধি উপেক্ষা পুলিশ পেশাদার দায়িত্ব পালন করছে।”

এ আন্দোলন চলাকালে রাজারবাগ, মিরপুর পুলিশ লাইন্স ও কাফরুল থানায় হামলার ঘটনার নিন্দা জানান ডিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, “৩১ বছরের কর্মজীবনে আমি রাজারবাগ ও মিরপুর পুলিশ লাইনে হামলার ঘটনা শুনিনি।”

পরে তিনি জানান, শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় হামলায় বেশ কজন পুলিশ সদস্য ‘গুরুতর’ আহত হয়ে  এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তিনি বলেন, “এটা সাধারণ ছাত্রদের দ্বারা হতে পারে না। যারা তাদের উস্কানি দিচ্ছে, তারা নৈরাজ্য তৈরি করে জনগণের পুলিশের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চাইছে।”

পুলিশের কাজ শিক্ষার্থীরা করায় ‘জনদুর্ভোগ’ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামতে ভয় পাচ্ছে।

“যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে। কাঁচা শাকসবজি, মাছ, মাংসের দাম বেড়ে গেছে। জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। মহানগরে এমন জনদুর্ভোগ দীর্ঘ দিন চলতে পারে না।”