নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে রোদ ও বৃষ্টির মধ্যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতেও দেখা গেছে কোনো কোনো অভিভাবককে।
এই অভিভাবকরা আশা করছেন, চলমান এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই গণপরিবহন ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার করতে বাধ্য হবে সরকার।
পরদিন তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ঢাকার অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীরাও। গত চার দিন ধরে তাদের বিক্ষোভের কারণে দিনভর প্রায় অচল থাকছে ঢাকার সড়ক; ফলে ভোগান্তিতে সড়কে চলছে।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করলেও শিক্ষার্থীদের সড়কে নামা আটকানো যায়নি। বৃহস্পতিবারও সড়কে নামে শিক্ষার্থীরা; তারা বিভিন্ন যানবাহনের লাইসেন্স পরীক্ষা করছিল।
মহাখালী মোড়ে সকাল সাড়ে ১০টায় সড়ক অবরোধ করে সাতটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ‘জরুরি প্রয়োজনে’ থাকা গাড়ি বাদেত অন্যগুলো আটকে যায় তাদের কাছে।
সেখানে হালিমা খাতুন নামে এক অভিভাবক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সড়কে আইন মানতে বাধ্য করতে পেরেছে ছেলেমেয়েরা। যে পুলিশ কখনও আইনের তোয়াক্কা করত না, আজকে তাদেরও ধরছে তারা। তারা প্রমাণ করতে পেরেছে- কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”
বেশ ক’বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন মহাখালীর একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা আদনান খান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষার্থীদের এই দাবি ন্যায্য। নয় দফা দাবিগুলো বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের। সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামাতে হলে এ নয় দফা পূরণের কোনো বিকল্প নেই।”
শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে- বেপরোয়া চালককে ফাঁসি দিতে হবে, শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএসে ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় গতিরোধক দিতে হবে; রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকদের গাড়ি চালনা বন্ধ করতে হবে ইত্যাদি।
মহাখালীতে আটকে পড়া সাঈদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা নিজেরাই তো সড়কে আইন মানি না। এই আন্দোলন আমাদের সড়কে আইন মানতে বাধ্য করবে।”
কাকরাইল মোড়ে দেখা যায় অভিভাবক শামীম আরাকে দুই সন্তানকে নিয়ে সড়কে।
উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় থাকা অভিভাবক শায়লা রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সড়কে আমাদের বাচ্চারা তো নিরাপদ না, আমরাও না। নিরাপদ সড়ক চাই-আন্দোলনের সবগুলো দাবি মেনে নিতে হবে সরকারকে।”
রামপুরা-বাড্ডা এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছিল ইমপিরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা; মেরুল বাড্ডা এলাকায় গাড়ির লাইসেন্স পরীক্ষায় মেয়াদোত্তীর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছে আটকা পড়েন আতিকুল ইসলাম; পরে মামলাও হয় তার বিরুদ্ধে।
আতিকুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে মামলা খাইছি, কোনো দুঃখ নাই। সড়কে নামছি, অথচ নিজের কাগজপত্র ঠিক নাই। উচিৎ শিক্ষা হইছে। জীবনে আর এই ভুল করব না।”
অবরোধের কারণে হেঁটে মহাখালী থেকে গাবতলীর উদ্দেশে রওনা হওয়া ফজলে রাব্বী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে দুর্ভোগ হচ্ছে, এটা ঠিক। কিন্তু এই আন্দোলন তো যৌক্তিক। কোনো আইন নাই, শৃঙ্খলা নাই। বাংলাদেশের বাস, ট্রাকগুলো তো কোনো নিয়ম মানতে রাজি না। এদের কিছু বললে, দুদিন পর পর সড়কে স্ট্রাইক করে বসে। এত বড় আন্দোলনের পরও একটা সিস্টেমে যদি না আসে, তবে তা দুঃখজনক হবে।”
সালমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে এ আন্দোলনের কারণে আমাদের অনেক গাফিলতি বের হয়ে আসছে। পুলিশ লাইসেন্স না থাকার কারণে গাড়ি ফেলে দিয়ে চলে গেছে। আশা করছি, এই আন্দোলনের মাধ্যমে নিরাপদ সড়কের একটা বিহিত হবে।”
লালমাটিয়া থেকে আসা গৃহবধূ রায়হানা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের মেয়েরা আন্দোলনে আসছে। আমরা তো আর বাসায় বসে থাকতে পারি না। তাদেরকে একা ছেড়ে না দিতে পারিনি, তাই আমরাও চলে এসেছি।”