বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে শুক্রবার এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ ও এর বিচারের দাবি তারা।
মিরপুরে সনি সিনেমা হলের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বেসরকারি চাকুরে জাকিয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, “এরকম ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের মারধর করার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা আর হতে পারে না। আমরা চাই এটার বিচার হোক এবং এটা হতেই হবে আর এই নয় দফা বাস্তবায়ন হোক।”
বৃহস্পতিবার বিকালে মিরপুর ১৩ নম্বরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এসময় পুলিশের সঙ্গে এক দল যুবকও শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে। এতে আহত হয় কয়েকজন শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবিকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে জাকিয়া বলেন, “আমরা যেহেতু চাকরি করি, প্রতিদিন আমরা অফিসে যাই। আমরাও বুঝি, রাস্তার দুর্ভোগগুলো আসলে কী। এটার সমাধান হওয়া উচিৎ। সরকারের উচিৎ নিয়মতান্ত্রিকভাবে এর সমাধান করা।
অভিভাবক শামীম আরা নিপা বলেন, “বাচ্চাদের ওপর পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ যেই হোক না কেন কারও আক্রমণই কাম্য নয়। আমরা তাদের ওপর নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং এর শাস্তির দাবি জানাই।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মিরপুর ২ নম্বরে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থীকে পুলিশ মারধর করেছে বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছে।
শিক্ষার্থীরা ‘যৌক্তিক দাবিতে’ আন্দোলন করছে মন্তব্য করে শিক্ষার্থীদের ওপর হওয়া এই আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে শামীম আরা নিপা বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া মেনে নিলে তারা ঘরে ফিরে যাবে। তারা সমস্ত মানুষের নিরাপত্তা চায়, এটা তো ভুল কিছু না। কিন্তু তাদের ওপর আক্রমণ আমাদের সহ্যের বাইরে। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই আমরা।
“গত পাঁচ দিনে ওরা যা করে দেখিয়েছে তা এ জাতির জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা চাই দাবি আদায় করে সুস্থ নিরাপদভাবে আমাদের সন্তানরা ঘরে ফিরে যাক।”
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পঞ্চম দিন বৃহস্পতিবারে মিরপুর ১০ নম্বরে আসা অনেক শিক্ষার্থীকেই ট্রাফিকের ভূমিকায় দেখা যায়। অনেকে আবার পথচারীদের নির্দেশনা দিয়েছে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে।
মাস্টারমাইন্ডের দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক সিরাজ বলেন, “ছাত্ররা বড়দের রিপ্রেজেন্ট করছে। আমরা যে সাহসটা পাচ্ছি না, তা তারা করে দেখাচ্ছে। পুলিশ যেভাবে গতকাল নির্যাতন চালিয়েছে, তা অন্যায়।”
শিক্ষার্থীরা ‘লজিক্যালি-পজিটিভলি’ আন্দোলন করছে জানিয়ে এই অভিভাবক আরও বলেন, “দেশকে তারা সোজা করে ফেলছে। আমরা বড়রা যে কাজটা পারি নাই, সরকার পারে নাই, সেটা ওরা করে দেখাইছে। অনেকের এটা সহ্য না, শিখতে চাচ্ছে না ওদের কাছ থেকে। এজন্যই মারছে ওদের।”
“বাচ্চারা ওদের ন্যায্য দাবিতে আছে। কাল একজন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে, আজ যে কেউ মারা যাবে না সেই নিশ্চয়তা তো আমরা দিতে পারছি না। এই শিক্ষার্থীদের জন্য সবারই টনক নড়ল। ওরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল আমরা কতটা অসচেতন।”
মানববন্ধনে আসা অভিভাবক আমিরুল ইসলাম খান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের বাচ্চাদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়- সেদিকটাতে সরকারকেই নজর দিতে হবে।”
‘আসুন শুধরাই’, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘ট্রাফিক আইন ঢেলে সাজাই’, ‘নিরাপদে ঘরে ফিরুক প্রতিটি প্রাণ’, ‘যে রাষ্ট্র আমার সন্তানের নিরাপত্তা দিতে পারে না/ তার কোন অধিকার নেই আমার সন্তানকে আঘাত করা’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিলেন অভিভাবকরা।