প্রায় দেড় যুগ পর ঠাকুরগাঁও এসে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা নিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 29 Mar 2018, 06:23 PM
বৃহস্পতিবার বিকালে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিলে তিনি সোনার বাংলা উপহার দেবেন।
ঠাকুরগাঁওবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই। গত নির্বাচনে তিনটি আসনেই আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন। ২০১৮ এর ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই…আপনার ওয়াদা করেন, হাত তুলে ওয়াদা করেন নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।”
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পরপর দুইবার ক্ষমতায় এসেছে বলেই প্রতিটি গ্রামে গ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এই উন্নয়নের ধারাবহিকতা বজায় রাখার জন্য আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দিতে হবে।
“আমরা দেশের উন্নয়ন চাই। বিএনপি আসা মানেই দেশ ধ্বংস হওয়া, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা, দুর্নীতি করা, লুটপাট করা, সন্ত্রাস করা, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা। আওয়ামী লীগ আসা মানে উন্নয়ন, শান্তি, দেশের উন্নতি, ছেলেমেয়েদের লেখাপাড়া, কর্মসংস্থান, মানুষের উন্নত জীবন। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল থেকে সবখানে প্রত্যেকটা মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে এটাই আমাদের লক্ষ্য।”
বিগত বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে পাঁচ-পাঁচবার দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। কেন হল? কারণ স্পষ্ট।… খালেদা জিয়া আর তার ছেলেরা অর্থ সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করেছে।
“এ কথা আমি বলছি তা না, আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এটা বের করেছে এবং তাদের কোর্টের রায়ে বেরিয়েছে, সিঙ্গাপুরে… সেখানে ধরা পড়েছে তার ছেলেদের লুটপাটের টাকা। সেই টাকা আমরা দেশে ফিরিয়ে এনেছি; জনগণের টাকা জনগণের কাজে ব্যয় করেছি।”
তিনি বলেন, “ওই যে ফখরুল ইসলাম, দিনরাত কথা বলতে বলতে… গলা ফুলায়ে কথা বলতে বলতে গলাই খারাপ হয়ে যায়। বারবার গলার চিকিৎসাও করতে হয়। মিথ্যা কথা বলার একটা সীমা আছে। সারা দিন মিথ্যা কথা বললে- এত মিথ্যা কথা বললে তো আল্লাহও নারাজ হয়।”
প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভা যেখানে হয়েছে, সেই সদর (ঠাকুরগাঁও-১) আসন থেকেই ২০০১ সালের নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কৃষি ও বিমান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন মির্জা ফখরুল।
সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বিমানমন্ত্রী যে ছিল, বিমানের কী উন্নয়নটা করেছে বলেন? বিমানের প্লেন ঝরঝর, চলে না। টাকাপয়সা সব লুটপাট। রাডারস্টেশন নষ্ট। সবকিছু ধ্বংস করে রেখে গেছে।”
“সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট- এটা বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপির আমলে। বিমানমন্ত্রী আপনাদের এখানকার, আর সৈয়দপুর এয়ারপোর্টটা বন্ধ করে দেয়। বিএনপি যখন ক্ষমতায়- ওই এয়ারপোর্ট বন্ধ। আমরা সরকারে এসেছি- সেই এয়ারপোর্ট আজকে চালু করে দিয়েছি, যেখান থেকে আজকে সব মানুষ যাতায়াত করতে পারছে।”
সে সময় রাজশাহী ও বরিশাল বিমানবন্দরও যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তো আপনারা বুঝতেই পারেন এদের কাজটা কী… এরা ধ্বংস করতে পারে, সৃষ্টি করতে পারে না। এরা মানুষেরটা লুটপাট করে খেতে জানে, মানুষকে দিতে জানে না।”
এর আগে ২০০১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিতে ঠাকুরগাঁওয়ে এসেছিলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার পুরো শহর ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে সাজানো হয়। শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড গোলচত্বর সাজানো হয় মনোরম সাজে।
ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশের পরিচালনায় জেলা স্কুল মাঠের জনসভায় রংপুর বিভাগের আট জেলার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অংশ নেন।