পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তিকে ‘অসম’ দাবি করে এই চুক্তি সইয়ের সময়কালে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইসমাইল বলেছেন, এই কারণে এই চুক্তি কখনোই বাস্তবায়ন হবে না।
Published : 14 Jan 2018, 09:06 PM
বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘শান্তিচুক্তির সুফল : পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রসার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় নিজের এই সংশয়ের কথা জানান।
১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক ছিলেন ইসমাইল। ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে শান্তি চুক্তি সই হয়।
শান্তি চুক্তি মধ্য দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ছেড়ে আসা জেএসএস নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ((সন্তু লারমা) চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে আসছেন।
অন্যদিকে চুক্তির সময়ের মতো এখনও সরকার প্রধানের দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা বলছেন, চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে, বাকিগুলোও বাস্তবায়ন হবে।
এই চুক্তির ক্ষেত্রে নিজের সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরতে গিয়ে ইসমাইল বলেন, “শান্তি চুক্তিটা বলতে গেলে আমার হাত লেগেছিল ভালো করেই, এই চুক্তি মেজর অংশটা আমার সময়ে হয়েছে।”
পার্বত্যাঞ্চলে স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাশায় দীর্ঘদিন ধরে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে আসা সন্তু লারমাদের আগ্রহের শান্তি চুক্তি হয় বলে দাবি করেন এই সরকারি কর্মকর্তা।
“শান্তিচুক্তির নেতারা বার বার বলতেছিল, যেভাবেই হোক একটা চুক্তি করেন। চুক্তি যদি না করি তাহলে টিকতে পারছি না, এবং এই চুক্তিতে আমাদের পক্ষে কিছু সুযোগ দেন, না হলে পাহাড়িরা আমাদের মেরে ফেলবে।”
“তাহলে ২৫ বছর কেন যুদ্ধ করেছেন? এই জন্য আনইকুয়েল চুক্তির অনেক ধারা আছে, এগুলো জীবনেও ইমপ্লিমেন্টেড হবে না। সন্তু লারমা মুখে যাই বলুক, কোনো লাভ নেই। তার নেতারা যারা আছে তারাও জানে, খুব ভাল করে।”
শান্তি চুক্তিতে পাহাড়িদের ভূমিকার যে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তার দিকে ইঙ্গিত করেই এই চুক্তিকে অসম বলে দাবি করেন ইসমাইল।
“তারা (পাহাড়িরা) এখনও মনে করে, এই অঞ্চল, এই জায়গাটা তাদের। তারা কিন্তু এই কথাটা একেবারে ভুলে গেছে যে, ৩০০ বছর আগে বার্মা থেকে পিটন খেয়ে এই দেশে চলে এসেছিল। ভুল কিছু ধারণা আছে, তবে সেটাও বেশি দিন থাকবে না।”
আলোচনা অনুষ্ঠানে এই বক্তব্য দেওয়ার পর উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের তা প্রকাশ না করতেও অনুরোধ জানান কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইসমাইল।
রাঙামাটি থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক রাঙামাটি’ পত্রিকার আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির দৈনিকটির এই আলোচনা অনুষ্ঠানে পাহাড়ি কোনো আলোচক ছিলেন না। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।
অনুষ্ঠানে আলোচনার পর পর্যটন শিল্পে অবদানের জন্য শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী, পর্যটকসহ বেশ কয়েকজনকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
দৈনিক রাঙামাটির প্রকাশক মো. জাহাঙ্গীর কামালের সভাপতিত্বে আলোচনায় অন্যান্যর মধ্যে পেটেলকো লিমিটেডের পরিচালক মো. মাসুদ খান, ইবাইস ইউনিভার্সিটির ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ, ডেইলি অবজারভারের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক নাসিমা আক্তার সোমা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানের শিরোনামের প্রসঙ্গ ধরে আলোচনায় ইসমাইল বলেন, “সেখানে (পার্বত্য চট্টগ্রাম) যথাযথ থাকার জায়গা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুলিশ বা আর্মি দিয়ে নয়, পাহাড়িদের দিয়েই করতে হবে।
“টুরিজম সিকিউরিটি উন্নতি করার একমাত্র কায়দা তাদের স্বার্থ রক্ষা করা। গভর্নমেন্ট ফোর্স সেটা পারবে না। রাতে কী করে পুলিশ পালায়, আর্মি পালায়, সেটা আমি নিজ চোখে দেখেছি।”