এমপিও দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের বাড়ি ফেরার অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, নতুন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে সরকারের সঙ্গে ‘লড়াই করে যাচ্ছে’ শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
Published : 30 Dec 2017, 09:40 PM
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টাকা পাওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন পদের অনুমোদন দিলেই এমপিও দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে রাজি করিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
সরকারের স্বীকৃতি পাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থানকারী শিক্ষকরা রোববার থেকে অনশন করছেন।
সচিবালয়ে শনিবার জেএসসি-জেডিসির ফল প্রকাশের সময় এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “আমরা তো তাদের (শিক্ষক) জন্য লড়াই করছি। তারাও জানেন কী পরিমাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা কষ্ট না করে বাড়িতে ফিরে যাক, এই লড়াই তারাও করবেন অন্য পদ্ধতিতে, আমরাও লড়াই করে যাচ্ছি, এই অনুরোধ।”
২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তাদের বিষয়েও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে তাকে কনভিন্স করেছি যে, আপনি টাকা না দিলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। আপনি টাকাটা দেন, আপনি নিজেই একটি নীতিমালা তৈরি করার জন্য উদ্যোগী হন। যে রকম বলবেন সে নীতিমালা মেনেই চলব। তিনি (অর্থমন্ত্রী) রাজি হয়েছেন। সে হিসেবে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি করার বিষয়ে কথা হয়েছে।”
শিক্ষকদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “কষ্ট করে শীতের মধ্যে না খেয়ে থেকে কোনো লাভ হচ্ছে না, লাভ হলে আমরাও করতাম। আমরা তো তাদের চেয়ে কম করি না, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।
“যদি সরকারের আর্থিক সংগতি হয়, আমাদের অর্থ দেয় আমরা তাৎক্ষণিকভাবে (এমপিও) দিতে পারব, আমরা তৈরি আছি।”
এমপিও দেওয়ার প্রক্রিয়া তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একাডেমিক কার্যক্রম চালানোর অনুমোদন দেওয়ার সময়ই বলে দেওয়া হয় এমপিও না দেওয়ার শর্তে অনুমোদন দেওয়া হল।
“আমরা এসব প্রতিষ্ঠানকে নানা কারণেই অনুমোদন দেই। তখন লিখে দেই এমপিও না দেওয়ার শর্তে অনুমোদন দেওয়া হয়, তারাও লিখে দেয় যে আমরা এটা চাই না। কিন্তু পরে বাস্তবে টিকে না, কারণ পরবর্তীকালে আপনার মনও জয় করে ফেলছে, আমার মনও জয় করে ফেলছে যে, তারা না খেয়ে আছে।”
এমপিও দেওয়ার পদ্ধতি ১৯৮০ সালে প্রথম চালু হয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তখন ২০ শতাংশ এমপিও দেওয়া হত, ধাপে ধাপে তা বাড়িয়ে শতভাগ করা হয়েছে। আগে তো এসব জায়গায় এক টাকাও সাহায্য দেওয়া হত না।
নাহিদ বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণে শিক্ষকরা এমপিও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো চাইই যে সব শিক্ষক বেতন পাক। এজন্য কী পরিমাণ তৎপরতা চালাতে হয় এবং কী পরিমাণ চেষ্টা করতে হয়…।
“আমরা তো আমাদের কাজ করে বসে আছি। এটা দিতে অর্থ লাগে, অর্থ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়, সরকার। ওই টাকা দেওয়া আর আমাদের ঘর বানাবার টাকা দেওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে, এই পার্থক্যটা তারাও বোঝেন না।”
নাহিদ বলেন, “প্রতিবার সংসেদ কথা ওঠে আমি পক্ষে বলি, সংসদ সদস্যরাও বলেন, প্রতিবার বাজেট সেশনে এটা নিয়ে বড় ধরনের একটা বাহাস হয়।
“অর্থ মন্ত্রণালয় যদি বাজেটে এটা পাস করিয়ে না দেয় তবে আমরা টাকাটা পাব না। কারণ এটা একটা পদ। এটা স্থায়ীভাবে সৃষ্টি হয়ে যাবে এজন্য, আর সেটা করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
“ওই পদ সৃষ্টি হলে যদি টাকা দেয় আর আইন মন্ত্রণালয় মনে করে এটা আইন সম্মত হয়েছে তাহলে টাকাটা বাজেটে পাব তখন আমরা দিতে পারব। যারা মনে করেন আমরা চাই না তারা মোটেই এটার খোঁজ রাখেন না। যাদের কাছ থেকে পাওয়া দরকার তাদের কোনো চাপ প্রয়োগ করেন না, তারাও মনে করেন আমরা দায়ী। আমরা তো দিতেই চাই। তারা তো আমাদের পরিবারের সদস্য।”
শিক্ষকরা না বুঝেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর দায় চাপান বলে দাবি করেন নাহিদ।
“এই মেসেজটা তারা নিজেরা গ্রহণ করতে পারেন না, আমাদের চাপ দেন। আমরা জানেপ্রাণে চেষ্টা করতেছি।”