ফরহাদ মজহার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলার অনুমতি নিল পুলিশ

ফরহাদ মজহারের অন্তর্ধানের ঘটনাটি ‘সাজানো বলে নিশ্চিত’ হওয়ার পর তার এবং অপহরণের অভিযোগকারী তার স্ত্রী ফরিদা আখতারের বিরুদ্ধে মামলার অনুমতি পেয়েছে পুলিশ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2017, 01:42 PM
Updated : 7 Dec 2017, 06:44 PM

ঢাকার মহানগর হাকিম খুরশিদ আলম বৃহস্পতিবার সকালে মামলার শুনানি নিয়ে বিকালে এই আদেশ দেন বলে সংশ্লিষ্ট আদালতের নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক নিজামউদ্দিন জানিয়েছেন।

সকালে শুনানিতে হাজির হয়ে ফরিদা আখতার এই মামলায় পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে আপত্তি জানিয়ে নারাজি আবেদন দাখিলের অনুমতি চাইলে বিচারক তাতে সায় দিয়েছিলেন বলে তার অন্যতম আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ জানিয়েছিলেন।

তিনি তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “বাদী বলেছেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বাদীর বিরুদ্ধে শাস্তির আবেদন করেছেন, এর কোনো যুক্তি নেই। তিনি সঠিক মামলাই করেছিলেন। নারাজি আবেদনে মামলার সত্যতা তুলে ধরে দেখানো হবে- ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন কতটা অসার। প্রয়োজনে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।”

এরপর বিচারক ৯ জানুয়ারি নারাজি আবেদন দাখিলের দিন ঠিক করে দেন বলে জানিয়েছিলেন এই আইনজীবী।

আদালত পুলিশের কর্মকর্তা নিজামউদ্দিনও দুপুরে আদালতের ওই মৌখিক আদেশের কথা জানিয়েছিলেন।

তবে বিকালে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিথ্যা মামলা করায় বাদীর বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য আদালত নির্দেশ প্রদান করেছেন।”

পাশাপাশি ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধেও প্রসিকিউশনের অনুমতি পেয়েছে পুলিশ।

তার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “মিথ্যা ওই অপহরণের ঘটনায় তিনিই মূল ব্যক্তি। অপহরণের ঘটনা সাজিয়ে পুলিশকে হয়রানি করা হয়েছে।

“এছাড়া পরেও তিনি পুলিশ ও আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন।”

গত ৩ জুলাই সকালে রাজধানীর শ্যামলীর বাসা থেকে বেরিয়ে ফরহাদ মজহারের নিখোঁজ হওয়ার খবর আসে। ওই দিনই ফরিদা আখতার তার স্বামীকে অপহরণের অভিযোগ এনে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন, যা পরে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

এই অন্তর্ধান নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সব মহলে আলোচনার মধ্যে ১৮ ঘণ্টা পর গভীর রাতে নাটকীয়ভাবে যশোরে বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করে র‌্যাব-পুলিশ।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা সেদিনই বলেছিলেন, অপহরণের কোনো নজির তারা পাননি; ফরহাদ মজহার নিজেই অপহরণের ‘নাটক’ করেছিলেন বলে তারা মনে করছেন।

তবে ফরহাদ মজহার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে অপহরণের কথাই বলেন। তিনি সেখানে দাবি করেন, তাকে অপহরণ করে খুলনায় নেওয়া হয়েছিল। অপহরণকারীরা তার কাছ থেকে মুক্তিপণও দাবি করেছিল।

এ বিষয়ে তদন্ত শুরুর পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গত ১০ জুলাই ঢাকার আদালতে অর্চনা রানি নামে এক নারীকে হাজির করে। নিজেকে ফরহাদ মজহারের ‘শিষ্য’ বলে জবানবন্দিতে দাবি করেন তিনি।

সেখানে তিনি বলেন, সেদিন ফরহাদ মজহার তার জন্য অর্থ জোগাড় করতেই বেরিয়েছিলেন এবং ১৫ হাজার টাকাও পাঠিয়েছিলেন।

খুলনায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টের দোকানে ফরহাদ মজহারের যাওয়ার এবং ওই এলাকায় তার একাকী ঘোরাফেরার একটি ভিডিও পরে সাংবাদিকদের সরবরাহ করে পুলিশ।

ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মাহবুবুল হক গত ১৪ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পাশাপাশি মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে মজহার দম্পতির বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করার অনুমতি চান।

ওই দিন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) গোলাম মোস্তফা রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “অভিযোগটি ছিল মিথ্যা। এ কারণে ফৌজদারি দণ্ডবিধির  ২১১ ও ১০৯ ধারায় ব্যবস্থা নিতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে, যাতে তাদের এবং সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনা হয়।”

ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় মিথ্যা মামলা দায়েরের শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে কেউ কোনো অভিযোগ দায়ের করলে অথবা কোনো অপরাধ করেছে বলে মিথ্যা মামলা দায়ের করলে মামলা দায়েরকারীকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।

তবে অভিযোগের বিষয় যদি মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন বা সাত বছরের বেশি সাজার যোগ্য হয়, আর সেই অভিযোগ যদি মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে মিথ্যা অভিযোগকারীর সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড হবে।

আর ১০৯ ধারায় অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্রে অংশ নেওয়া, উসকানি দেওয়া বা সহযোগিতার বিষয়ে বলা হয়েছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে আসামি যে অপরাধ করার ষড়যন্ত্র করেছেন বলে প্রমাণিত হবে, তার ক্ষেত্রে সেই অপরাধের শাস্তিই প্রযোজ্য হবে।