মজহার দম্পতির বিরুদ্ধে পাল্টা মামলার আবেদন পুলিশের

ফরহাদ মজহারকে অপহরণের অভিযোগের ‘সত্যতা পাওয়া যায়নি’ জানিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পাল্টা ‘মিথ্যা মামলা দায়েরের’ অভিযোগে একটি মামলা করার অনুমতি চেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2017, 07:48 AM
Updated : 14 Nov 2017, 03:48 PM

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মাহবুবুল হক মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে ওই প্রতিবেদন জমা দেন বলে আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এস আই নিজাম উদ্দিন জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতারের করা মামলার সত্যতা পাওয়া যায়নি। আসল ঘটনা ওই মামলায় আড়াল করা হয়েছে - এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।”

‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে’ মামলা দায়ের করায় ফরিদা আখতার ও ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে এস আই নিজাম বলেন, আদালত আগামী ৭ ডিসেম্বর এ বিষয়ে শুনানির দিন রেখেছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (পশ্চিম) গোলাম মোস্তফা রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা গত বৃহস্পতিবারই আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছি। অভিযোগটি ছিল মিথ্যা। এ কারণে ফৌজদারি দণ্ডবিধির  ২১১ ও ১০৯ ধারায় ব্যবস্থা নিতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে, যাতে তাদের এবং সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনা হয়।”

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মামলার বাদী ফরিদা আখতার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আমাকে কিছু জানানো হয়নি। যদি ওই প্রতিবেদনই দিয়ে থাকে, তাহলে তো আমাকে মিথ্যাবাদী বানানো হয়েছে।

“যদি এটা দিয়ে থাকে তাহলে এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। পুলিশ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত করেছে কি না- সে বিষয়ে আমি গ্যারান্টি চাই।”

গত ৩ জুলাই সকালে রাজধানীর শ্যামলীর বাসা থেকে বেরিয়ে কবি প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারের নিখোঁজ হওয়ার খবর আসে। ওইদিনই ফরিদা আখতার তার স্বামীকে অপহরণের অভিযোগ এনে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন, যা পরে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

ডানপন্থি এই অধিকারকর্মীর অন্তর্ধান নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সব মহলে আলোচনার মধ্যে ১৮ ঘণ্টা পর গভীর রাতে নাটকীয়ভাবে যশোরে বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করে র‌্যাব-পুলিশ।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা সেদিনই বলেছিলেন, অপহরণের কোনো নজির তারা পাননি; ফরহাদ মজহার নিজেই অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন বলে তারা মনে করছেন।

তবে ফরহাদ মজহার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে অপহরণের কথাই বলেন। তিনি সেখানে দাবি করেন, তাকে অপহরণ করে খুলনায় নেওয়া হয়েছিল। অপহরণকারীরা তার কাছ থেকে মুক্তিপণও দাবি করেছিল।

এ বিষয়ে তদন্ত শুরুর পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গত ১০ জুলাই ঢাকার আদালতে অর্চনা রানি নামে এক নারীকে হাজির করে। নিজেকে ফরহাদ মজহারের শিষ্য বলে জবানবন্দিতে দাবি করেন তিনি।

সেখানে তিনি বলেন, সেদিন ফরহাদ মজহার তার জন্য অর্থ জোগাড় করতেই বেরিয়েছিলেন এবং ১৫ হাজার টাকাও পাঠিয়েছিলেন।

খুলনায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টের দোকানে ফরহাদ মজহারের যাওয়ার এবং ওই এলাকায় তার একাকী ঘোরাফেরার একটি ভিডিও পরে সাংবাদিকদের সরবরাহ করে পুলিশ।

তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ বলেছে, মামলায় অপহরণের যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা ‘পুরোপুরি ভুয়া’ 

ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় মিথ্যা মামলা দায়েরের শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে কেউ কোনো অভিযোগ দায়ের করলে অথবা কোনো অপরাধ করেছে বলে মিথ্যা মামলা দায়ের করলে মামলা দায়েরকারীকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।

তবে অভিযোগের বিষয় যদি মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন বা সাত বছরের বেশি সাজার যোগ্য হয়, আর সেই অভিযোগ যদি মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে মিথ্যা অভিযোগকারীর সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড হবে।

আর ১০৯ ধারায় অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্রে অংশ নেওয়া, উসকানি দেওয়া বা সহযোগিতার বিষয়ে বলা হয়েছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে আসামি যে অপরাধ করার ষড়যন্ত্র করেছেন বলে প্রমাণিত হবে, তার ক্ষেত্রে সেই অপরাধের শাস্তেই প্রযোজ্য হবে।