পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে নারাজি দেবেন মজহারপত্নী

ফরহাদ মজহারকে অপহরণের অভিযোগের ‘সত্যতা পাওয়া যায়নি’ জানিয়ে আদালতে পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন দাখিল করবেন ডানপন্থি এই অধিকারকর্মীর স্ত্রী ফরিদা আক্তার।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2017, 07:26 AM
Updated : 7 Dec 2017, 08:19 AM

তার অন্যতম আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান বৃহস্পতিবার ঢাকার ৭ নম্বর মহানগর হাকিম খুরশীদ আলমের আদালতে হাজির হয়ে ফরিদা আক্তার তার আপত্তির কথা জানান।

ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মাহবুবুল হক গত ১৪ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পাশাপাশি মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে মজহার দম্পতির বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করার অনুমতি চান।

আদালত বিষয়টি ৭ ডিসেম্বর শুনানির জন্য রেখেছিল। সে অনুযায়ী ফরিদা বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে নারাজি দেওয়ার কথা জানিয়ে সময়ের আবেদন করেন। তার আবেদন ‍শুনে বিচারক ৯ জানুয়ারি নারাজি আবেদন দাখিলের দিন ঠিক করে দেন।

জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, “বাদী বলেছেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বাদীর বিরুদ্ধে শাস্তির আবেদন করেছেন, এর কোনো যুক্তি নেই। তিনি সঠিক মামলাই করেছিলেন। নারাজি আবেদনে মামলার সত্যতা তুলে ধরে দেখানো হবে- ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন কতটা অসার। প্রয়োজনে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।”

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার দিন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (পশ্চিম) গোলাম মোস্তফা রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “অভিযোগটি ছিল মিথ্যা। এ কারণে ফৌজদারি দণ্ডবিধির  ২১১ ও ১০৯ ধারায় ব্যবস্থা নিতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে, যাতে তাদের এবং সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনা হয়।”

গত ৩ জুলাই সকালে রাজধানীর শ্যামলীর বাসা থেকে বেরিয়ে কবি প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারের নিখোঁজ হওয়ার খবর আসে। ওইদিনই ফরিদা আখতার তার স্বামীকে অপহরণের অভিযোগ এনে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন, যা পরে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

এই অন্তর্ধান নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সব মহলে আলোচনার মধ্যে ১৮ ঘণ্টা পর গভীর রাতে নাটকীয়ভাবে যশোরে বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করে র‌্যাব-পুলিশ।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা সেদিনই বলেছিলেন, অপহরণের কোনো নজির তারা পাননি; ফরহাদ মজহার নিজেই অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন বলে তারা মনে করছেন।

তবে ফরহাদ মজহার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে অপহরণের কথাই বলেন। তিনি সেখানে দাবি করেন, তাকে অপহরণ করে খুলনায় নেওয়া হয়েছিল। অপহরণকারীরা তার কাছ থেকে মুক্তিপণও দাবি করেছিল।

এ বিষয়ে তদন্ত শুরুর পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গত ১০ জুলাই ঢাকার আদালতে অর্চনা রানি নামে এক নারীকে হাজির করে। নিজেকে ফরহাদ মজহারের শিষ্য বলে জবানবন্দিতে দাবি করেন তিনি।

সেখানে তিনি বলেন, সেদিন ফরহাদ মজহার তার জন্য অর্থ জোগাড় করতেই বেরিয়েছিলেন এবং ১৫ হাজার টাকাও পাঠিয়েছিলেন।

খুলনায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টের দোকানে ফরহাদ মজহারের যাওয়ার এবং ওই এলাকায় তার একাকী ঘোরাফেরার একটি ভিডিও পরে সাংবাদিকদের সরবরাহ করে পুলিশ।

ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় মিথ্যা মামলা দায়েরের শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে কেউ কোনো অভিযোগ দায়ের করলে অথবা কোনো অপরাধ করেছে বলে মিথ্যা মামলা দায়ের করলে মামলা দায়েরকারীকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।

তবে অভিযোগের বিষয় যদি মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন বা সাত বছরের বেশি সাজার যোগ্য হয়, আর সেই অভিযোগ যদি মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে মিথ্যা অভিযোগকারীর সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড হবে।

আর ১০৯ ধারায় অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্রে অংশ নেওয়া, উসকানি দেওয়া বা সহযোগিতার বিষয়ে বলা হয়েছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে আসামি যে অপরাধ করার ষড়যন্ত্র করেছেন বলে প্রমাণিত হবে, তার ক্ষেত্রে সেই অপরাধের শাস্তেই প্রযোজ্য হবে।