পথশিশুদের জীবনমানের উন্নয়নে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অধিকারকর্মীরা।
Published : 24 Nov 2017, 11:23 PM
ঢাকার পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পথশিশু সেবা সংগঠনের ১০ বছর পূর্তির আয়োজনে তারা এই আহ্বান জানান।
সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভেলরি টেইলর বলেন, “ঢাকার পথশিশুদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে খুব বেশি কিছু করতে হবে না। নিজ নিজ অবস্থান থেকে একটুখানি হাত বাড়িয়ে দিলেই হবে। সবার একটু একটু প্রচেষ্টায় এই পথশিশুরা একদিন সত্যি রঙিন প্রজাপতি হয়ে উড়বে।”
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর শিশু একাডেমিতে এই আয়োজনে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, “সমাজে প্রতিটি মানুষই সহজাত, অলক্ষ্যণীয় কিছু অধিকার নিয়ে জন্মায়। কিন্তু এই পথশিশুরা জন্ম থেকেই সে অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত। সমাজে অচ্ছুত বলে বিবেচিত পথশিশুরা এখন অবনমিত জীবনযাপন করছে। তাদের মধ্যে কন্যাশিশুদের অবস্থা আরও জটিল।”
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত এই পথশিশুদের অধিকার দিয়ে তাদের আলোর পথে আনতে বিবেকবোধসম্পন্ন নাগরিকদের মানবিকতার উন্মেষ ঘটানোর আহ্বান জানান সুলতানা কামাল।
তিনি বলেন, “এ সমাজে মহৎপ্রাণ মানুষদের মনুষ্যত্ববোধই পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারে।তারাই পারে পথশিশুদের রূপান্তরের সুযোগ করে দিতে। আমরা সবাই মিলে আনন্দের সঙ্গে এই ব্রতটি পালন করলে বাংলাদেশের কোনো শিশুকে আর পথশিশু হতে হবে না।”
ব্রাজিলের নাগরিক ও মানবাধিকারকর্মী লুসিও বেনেদিতো বাংলাদেশে এসেই পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। পথশিশুদের মানবিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক অবস্থান নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন। এই কাজে তিনি সঙ্গে পেয়ে যান এ দেশীয় সাত তরুণ স্বেচ্ছাসেবককে।
কোনো বিদেশি দাতা বা সংস্থা থেকে তহবিল গ্রহণ না করার শপথ নিয়ে অগ্রসর হওয়া এই সংগঠনটি বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবীদের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে।
সংগঠনের উদ্যোক্তা লুসিও বেনেদিতো বলেন, “অনেকে ভাবেন, এ দেশে এসব সংগঠন চালাতে গেলে নিশ্চয়ই আমাদের বিদেশ থেকে টানা আনতে হয়। তবে আমি ব্রাজিলে কাজ করার সময়ই শপথ নিয়েছি, শিশুদের নিয়ে কাজ করতে গেলে আমি এভাবে বিদেশি অর্থের উপর নির্ভর করব না। অর্থাভাবে কাজ করা প্রথমে মুশকিল ছিল। কিন্তু এ দেশের স্বেচ্ছাসেবকরা যখন এগিয়ে এসেছেন, তখন আমি অনুপ্রেরণা পাই, নতুন উদ্যম পাই।”
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, শিশু পল্লী প্লাসের প্রতিষ্ঠাতা প্যাট্রেসিয়া থের উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা পর্বের ফাঁকে এক দল পথশিশু এসে শুনিয়ে যায় তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের গল্প।
পথের কিনারে পলিথিনের অস্থায়ী নিবাসে পরিবারের সঙ্গে বসবাস, ঘিঞ্জি পরিবেশে বেড়ে উঠা, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কথা যখন ওরা বলছিল, তখন মিলনায়তনজুড়ে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। পরে ওরা শোনায়ম পথশিশু সেবা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেদের ভাগ্য ফেরানোর পাশাপাশি পরিবারের অন্য সদ্যসদেরও দিনবদলের স্বপ্নের কথা।
পরে সংগঠনের শিশুরা গান ও নৃত্য পরিবেশন করে।