ধর্মঘটের ঘোষণার পাল্টায় অটোরিকশা বর্জনের আহ্বান

অ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা বন্ধসহ কয়েকটি দাবিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের ধর্মঘটের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় তাদের বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন অনেক ফেইসবুক ব্যবহারকারী।

ওবায়দুর মাসুমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2017, 06:10 PM
Updated : 18 Nov 2017, 06:48 PM

অ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা ব্যবহারকারীদের কয়েকটি ফেইসবুক পেইজ ও গ্রুপে এ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লেখা হচ্ছে। পাশাপাশি ঢাকার অনেক বাসিন্দাও ফেইসবুকে একই আহ্বান জানাচ্ছেন। অটোরিকশা চালকদের বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানি ও বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ করছেন অনেকে।    

গত বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে চালকদের মধ্যে নতুন অটোরিকশা বরাদ্দ এবং অ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা বন্ধ করাসহ আট দফা দাবিতে ধর্মঘটসহ এক মাসের কর্মসূচি ঘোষণা করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

পরিষদের ঢাকা জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন দুলাল বলেন,আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টা ঢাকা ও চট্টগ্রামে ধর্মঘট পালন করবেন অটোরিকশা চালকরা। তারপরও দাবি পূরণ না হলে ১৫ জানুয়ারি থেকে দুই মহানগরে তাদের লাগাতার ধর্মঘট শুরু হবে।

তরুণ কথাসাহিত্যিক খালিদ মারুফ ফেইসবুকে লিখেছেন, “সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের ধর্মঘটের প্রতি মানুষের এতটুকুও সহানুভূতি নেই বলে মনে হচ্ছে।”

তার ওই পোস্টের কমেন্টে ইস্কান্দার মির্জা নামে একজন লিখেছেন, “জনগণ লাল কার্ড দিছে।”

কবির মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম লিখেছেন, “না থাকাটা খুব বে‌শি অযৌ‌ক্তিক নয়।”

“এই সব যে দিন উঠে যাবে সে দিন অনেকেই মুক্তি পাবে।চোরারা আর কত কাল ফুলে ফুলে লাল হবে,” অটোরিকশা চালক-মালিকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন সোমিক অধিপতি।

অটোরিকশা শ্রমিকরা মূলত অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা বন্ধের দাবিতে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন বলে মনে করছেন মহাখালীর বাসিন্দা এমদাদুল হক।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উবার বা পাঠাওয়ের মতো সেবা চালু হওয়ার পর অটোরিকশাচালকরা ভাড়া আগের চেয়ে কম নিতে বাধ্য হচ্ছে।

“তাদের আচরণেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। এ কারণেই তারা এসব সেবা বন্ধের ডাক দিয়েছে। তারা আটটি শর্তের কথা বললেও তাদের মূল উদ্দেশ্য একটিই। আমি চাই অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা অনুমোদন দেওয়া হোক। দ্রুত নীতিমালা তৈরি হোক। এবং ক্রমেই সিএনজি অটোরিকশাওয়ালাদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হোক।”

অটোরিকশা বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ‘উবার ইউজার অব বাংলাদেশ’ নামের একটি ফেইসবুক পেইজে মাহমুদ হাসান সজীব নামে একজন লিখেছেন, “উবার-পাঠাও বন্ধের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক সিএনজি চালকদের!!! গলায়পাড়া দিয়ে তিনগুণ চারগুণ ভাড়া আদায় করা সিএনজিওয়ালাদের বিরুদ্ধে আসুন রুখে দাড়াই। জিম্মি হয়ে থাকার দিন শেষ, আসুন সিএনজি বয়কট করি।”

সেখানে আসিফ আমির নামে একজন লিখেছেন, “বাইকারদের চিনে ওরা? ধর্মঘটের দিন হাজার হাজার বাইকার একসাথে বাইক নিয়া ঢাকার রাস্তা চষে বেড়াব, সামনে কারা থাকে দেখব একটু!! দুইদিন রাস্তায় ফাউ চষে বেড়ালে পাঠাওয়ের বাইকারদের কিচ্ছু যায় আসবে না।

“কিন্তু ওদের দুই দিন ফাউ বসে থাকলে অনেক কিছু যায় আসবে। ব্যাপারটা এমন না আমরা বাইকার বা ইউজাররা পাঠাও বা উবার না হলে চলতে পারব না। তবে সিএনজি বা অটোরিকশাচালকদের ওই চোষা স্বভাবের থেকে পাঠাও বা উবার ঢাকাবাসীকে বাচাচ্ছে। তাই এমন সময়োপযোগী উদ্যোগকে যারা ব্যাহত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আমরা বাইকাররা অবস্থান নিব।”

ঢাকায় অটোরিকশাগুলোকেও অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন নাহিদ মুহাম্মাদ নামে একজন।

‘পাঠাও ইউজারস অব বাংলাদেশ’ নামের ফেইসবুক পেইজে তিনি লিখেছেন,  “অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবাগুলো বাইক, কার এর সাথে সিএনজি অটোরিকশাও অ্যাড করতে পারে। এখানে অনেকে মনে করতে পারে এতে করে হয়ত বাইক, প্রাইভেট কার দিয়ে যারা এই সেবা দিয়ে আসছে তাদের ক্ষতি হবে। আদতে কিন্তু তা না।”

এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশে মোবাইল চালুর প্রথম দিককার ঘটনা মনে করে দেখেন। পাঠাও, উবার, স্যাম, মুভ কর্তৃপক্ষ সিএনজিঅটোরিকশা মালিকদের এই প্রস্তাব দিয়ে দেখতে পারেন।”

অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা চালু হওয়ার পর অটোরিকশাচালকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে দাবি করেন
ঢাকা জেলা অটোরিকশা
অটো টেম্পো মিশুক যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উবার-পাঠাও বেআইনিভাবে যাত্রী পরিবহন করছে। তাদের ব্যাপারে এখনও নীতিমালা হয় নাই। নীতিমালা হলেও তাতে কী আছে তাও তো আমাদের জানায় নাই সরকার। তারা প্রাইভেট গাড়ি দিয়া ট্রিপ মারছে। এইটা তো ইলিগ্যাল। তাদের কারণে আমাদের ট্রিপ কমে গেছে।”

অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা বন্ধের দাবিতে শ্রমিকদের সঙ্গে একাট্টা মালিকরাও। চালক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আটটি দাবির সাতটিকে ‘অযৌক্তিক’ বললেও অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা বন্ধের দাবিকে যৌক্তিক বলছেন ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক বরকত উল্লাহ বুলু।

তিনি শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের দাবিগুলোর বেশিরভাগের ভিত্তি নেই। তবে পাঠাও-উবারসহ অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা চালু হওয়ায় আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।”

তবে শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নেতা সাখাওয়াত হোসেন দুলাল বলেন, উবার-পাঠাও বন্ধ করা তাদের মূল দাবি নয়। কিন্তু এটাকেই সামনে নিয়ে আসছে সবাই।

“আমাদের মূল দাবি হল- পুরোনো অটোরিকশা পুনঃস্থাপন এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে চালকদের নামে ৯ হাজার সিএনজি অটোরিকশা বরাদ্দ দেওয়া। ৩ নম্বর দাবি ছিল অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা বন্ধ করা। কিন্তু সেই দাবিকে সামনে নিয়ে আসায় আমাদের মূল দাবিটা আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের আন্দোলনের ক্ষতি হচ্ছে।”

ঐক্য পরিষদের আট দফা

>> ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচল করা মেয়াদোত্তীর্ণ অটোরিকশা অপসারণ করে নতুন অটোরিকশা প্রতিস্থাপন

>> ঢাকায় চালকদের নামে পাঁচ হাজার এবং চট্টগ্রামে চার হাজার অটোরিকশা বিতরণ

>> উবার, পাঠাওয়ের মত অ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা বন্ধ করা

>> খসড়া পরিবহন আইন থেকে ‘শ্রমিক স্বার্থবিরোধী’ ধারা বাতিল

>> ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নে ব্যবহারিক পরীক্ষা বন্ধ করা

>> অননুমোদিত পার্কিংয়ের জন্য মামলা না করা

>> চালকদের ‘হয়রানি’ বন্ধ করা

>> নিবন্ধিত অটোরিকশা চালকদের ঢাকা জেলার সব জায়গায় চলাচলের অনুমতি দেওয়া