বিচারপতি সিনহার পদত্যাগ ছাড়া পথ ছিল না: অ্যাটর্নি জেনারেল

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগের কারণে আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা তার সঙ্গে বসতে না চাওয়ায় বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগ ছাড়া উপায় ছিল না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2017, 12:49 PM
Updated : 12 Nov 2017, 12:56 PM

তিনি প্রধান বিচারপতির পদ ছাড়ায় বিচার বিভাগ ভারমুক্ত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

মাহবুবে আলম বলেন, “বিচার বিভাগের কোনো লোক যদি কোনো প্রকার দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকে, চরিত্র স্খলনের সাথে জড়িত থাকে তাহলে কোনোভাবেই তার বিচার বিভাগে থাকা উচিৎ নয়।”

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে এক মাসের বেশি ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর বিদেশে যান বিচারপতি সিনহা। এরপর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ ওঠার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

ছুটি শেষ হওয়ার পরদিন শনিবার বিচারপতি সিনহার পদত্যাগপত্র পাঠানোর কথা জানায় বঙ্গভবন। দেশের ইতিহাসে প্রথম প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের ঘটনা নিয়ে রোববার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগে বিচার বিভাগে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে করণীয় কী-জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, “আমি আগেই বলেছিলাম সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলতে শুধু প্রধান বিচারপতিকে বোঝায় না। সব কজন বিচারপতিকে এবং প্রধান বিচারপতিকে বোঝায়। যেদিন অন্যান্য বিচারপতিরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একত্রে বসে মামলা নিষ্পত্তিতে অনীহা প্রকাশ করলেন এবং রাজি হলেন না, সেদিনই বিষয়টা ফয়সালা হয়ে গেছে।

“সেদিনই কিন্তু আমি বলেছিলাম, প্রধান বিচারপতি হিসেবে ফিরে এসে দায়িত্ব গ্রহণ করা উনার জন্য সুদূর পরাহত। আসলে পদত্যাগ করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। কারণ অন্যান্য বিচারপতিরা যদি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসতে না চান তাহলে তার অন্য কোনো পথ থাকে না।”

সুরেন্দ্র কুমার সিনহা

দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তার মতো গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিকে বিদেশে যেতে দেওয়া এবং সেখান থেকে পদত্যাগের সুযোগ দেওয়ায় সরকারের গাফিলতি আছে কি না-প্রশ্ন করা হলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “সরকারের কোনো গাফিলতি নেই। একটি ব্যক্তির ব্যাপারে যদি কোনো অভিযোগ থাকে এবং সবচেয়ে বড় কথা তিনি প্রধান বিচারপতি, তার ব্যাপারে তো সাধারণ আদালতে গিয়ে মামলা করা যায় না।

“এটা রাষ্ট্রপতির গোচরে গেছে, রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারকদের এটা জানিয়েছেন। অন্যান্য বিচারপতিরা তার সঙ্গে বসতে রাজি হননি। এটিই হলো বাস্তব এবং আমাদের সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে কোনোদিন এ ঘটনা ঘটেনি যে, সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। উনার সঙ্গে না বসার কারণ দেখিয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়েছে।

“ফলে এখন যারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ নিয়ে নানা রকম বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাচ্ছে এবং নানা রকম বক্তব্য দিচ্ছে এগুলো অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয় এবং শুধুমাত্র রাজনীতির খাতিরে তারা এগুলা বলছে।”

প্রধান বিচারপতির পদ ছাড়ায় এখন তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত হবে কি না জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, “এটা রাষ্ট্রপতির বিষয়। রাষ্ট্রপতি কী করবেন, এটা রাষ্ট্রপতিই জানেন।”

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগে কোনো সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে কি না-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “কোনো রকম শূন্যতা নাই। এ ব্যাপারে আমাদের আইনমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।”  

‘রিভিউ শুনানি সম্ভব নয়’

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের সময় ছিল আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ। বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা অবসরে যাওয়ার পর পদত্যাগ করলেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।

এখন আপিল বিভাগে পাঁচজন বিচারপতি থাকায় ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি সম্ভব নয় বলে জানালেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিনি বলেন, “রায়ের সময় যে কজন বিচারপতি ছিলেন, তার চেয় কম বিচারপতির বেঞ্চ হল রিভিউ করা সম্ভব না।

“নিয়মটা হল যে কয়জন বিচারপতি একটি রায় দিয়ে থাকেন, রিভিউ করতে হলে তত সংখ্যক বিচারপতি লাগে বা তার থেকে একজন বা দুজন বেশি লাগে। অন্যান্য বিচারপতিরা সব মন্তব্য বা রায়ই তারা সংশোধন করতে পারবেন বা পরিবর্তন করতে পারবেন বা বাতিলও করতে পারবেন।”

এস কে সিনহা প্রধান বিচারপতি থাকাকালে যেসব রায় হয়েছে, তার পদত্যাগে সেগুলোর ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “রায় তো উনি একা দেননি। আমি সে কথাই বারবার বলছি, আমাদের বিচার বিভাগে এককভাবে কোনো বিচারপতি বিচার করেন না, বিশেষ করে আপিল বিভাগে।

“বিচার যেগুলো হয়েছে, অন্যান্য বিচারপতিরাও উনার সঙ্গে ছিলেন। সুতরাং যেগুলোর রায় হয়েছে, সেসব রায়ে কোনো প্রভাবই পড়বে না এবং রায়ের কার্যকারিতাও কোনো রকম ক্ষুণ্ন হবে না।”

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, “রায়টা যদি ঘোষিত হয়ে থাকে তাহলে উনার (বিচারপতি সিনহা) পক্ষে অন্য একজন স্বাক্ষর করবেন। যেটা আমাদের সুপ্রিম কোর্টের বিধান। একজন বিচারপতি যদি একটি মামলা শুনে হঠাৎ পদত্যাগ করেন বা মারা যান, এটার রুলসই আছে তার পক্ষে অন্য একজন সই করবেন।”