জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা, ধর্মীয় উগ্রবাদে উৎসাহ দেওয়াসহ কয়েকটি অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া ঢাকার লেকহেড গ্রামার স্কুল কেন খোলার আদেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 09 Nov 2017, 06:10 PM
ওই স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিন এবং ১২ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের করা দুটি রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ রুল দেয়।
লেকহেড গ্রামার স্কুলের গুলশান ও ধানমণ্ডি শাখা বন্ধের আদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, কেন স্কুলের মালিককে স্কুল খোলা ও পরিচালনা করতে দেওয়ার জন্য বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়া স্কুলের শিক্ষার্থীদের সকল ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
শিক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়রম্যানকে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে আবেদনকারীপক্ষে শুনানি করেন এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার আখতার ইমাম ও রাশনা ইমাম।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম , তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
রুল জারি করলেও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আগামী রোববার বিষয়টি আবার শুনানির জন্য রেখেছে আদালত।
রিটকারী অভিভাবকদের পক্ষে এ এফ হাসান আরিফ শুনানিতে বলেন, জঙ্গি তৎপরতা বা সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে আচমকা এক আদেশে স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের কেউ যদি এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থেকে থাকে, তাহলে তাকে আইনের আওতায় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া স্কুলটির মালিকানাও পরিবর্তন হয়েছে।
স্কুল বন্ধ করে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে মন্তব্য করে এই আইনজীবী বলেন, “তারা এখন কোন স্কুলে যাবে? কীভাবে তারা তাদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে? বিনা নোটিসে এভাবে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া যায় না।”
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে বলেন, স্কুলটির বিরুদ্ধে জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা কার্যক্রমের আড়ালে উগ্র ধর্মীয় মতবাদ প্রচারের অভিযোগ রয়েছ। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তও অব্যাহত রয়েছে এবং সেই সূত্রেই স্কুলটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
বিচারক তখন বলেন, “স্কুলের সব শিক্ষার্থী জঙ্গি হলে সবাইকে অ্যারেস্ট করে নেন। এক-দুই জনের জন্য তো সব শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। তারা এখন কোথায় যাবে? কোথায় ভর্তি হবে? তাছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।”
এরপর আদালত আদেশ দিতে গেলে অ্যাটর্নি জেনারেল রোববার শুনানি করে তারপর আদেশ দেওয়ার আর্জি জানান। তখন আদালত রোববার আবার শুনানির তারিখ রেখে রুল জারি করে।
জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা, ধর্মীয় উগ্রবাদে উৎসাহ দেওয়াসহ কয়েকটি অভিযোগে গত সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকায় লেকহেড গ্রামার স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেয়। এরপর মঙ্গলবার ঢাকা জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ইলিয়াস মেহেদী ওই স্কুলে গিয়ে সিলগালা করে দেন।
সেদিন সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এখন থেকে স্কুলটি কোনো ধরনের কার্যক্রম চালালে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।