রাজধানীর ইস্কাটনে জোড়া খুনের মামলায় সাংসদপুত্র বখতিয়ার আলম রনি আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
Published : 30 Oct 2017, 10:39 AM
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এ মামলায় দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য ১৫ নভেম্বর দিন ধার্য করে দিয়েছেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আবু সালেহ মো. সালাউদ্দিন খান।
এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মো. মাকসুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ থেকে একদিনেই যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ করা হবে। এরপর আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করবে এবং রাষ্ট্রপক্ষ তা খণ্ডন করবে। নভেম্বরেই এ মামলার রায় পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি।”
রোববার আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানির দিন থাকায় রনিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে ২৪ জন সাক্ষী যে বক্তব্য দিয়েছে তা শুনিয়ে এর বিপরীতে রনির কোনো বক্তব্য আছে কিনা তা জানতে চান বিচারক।
রনি আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও কোনো লিখিত বক্তব্য বা সাফাই সাক্ষ্য দেবেন না বলে বিচারককে জানান।
এমপিপুত্র বখতিয়ার আলম রনির পক্ষে মামলাটি লড়ছেন আইনজীবী কাজী নজিবুল্যাহ হীরু।
২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল রাতে নিউ ইস্কাটনে গাড়ি থেকে ছোঁড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে আবদুল হাকিম নামের এক রিকশাচালক এবং ইয়াকুব আলী নামের এক অটোরিকশাচালক আহত হন।
পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ এপ্রিল হাকিম এবং ২৩ এপ্রিল ইয়াকুব মারা যান।
এ ঘটনায় নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম ১৫ এপ্রিল রমনা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গতবছর ৩১ মে ঢাকার এলিফেন্ট রোডে মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি পিনু খানের বাসা থেকে তার ছেলে বখতিয়ার আলম রনিকে আটক করে।
তদন্ত শেষে ২১ জুলাই রনিকে একমাত্র আসামি করে ৩০২ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এসআই দীপক কুমার দাস।
‘খুনের উদ্দেশ্য না থাকলেও’ আসামি জানতেন যে তার গুলিতে কেউ হতাহত হতে পারে- এই যুক্তিতে হত্যার অভিযোগ এনে এ মামলায় ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দেন তিনি।
নিহতের শরীরে পাওয়া গুলির ব্যালাস্টিক রিপোর্ট, রনির অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের প্রতিবেদনসহ মোট ১৫টি আলামত অভিযোগপত্রের সঙ্গে যুক্ত করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
রনির গাড়িচালক ইমরান ফকির এবং ঘটনার সময় গাড়িতে থাকা তার দুই বন্ধু ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন। কালো রঙের ওই প্রাডো গাড়ির মালিক সংসদ সদস্য পিনু খান বলে গণমাধ্যমে খবর আসে সে সময়।
রনির বন্ধু কামাল মাহমুদ ঢাকার হাকিম আদালতে জবানবন্দিতে বলেলেন, সাংসদপুত্রই সেদিন মাতাল অবস্থায় লাইসেন্স করা পিস্তল থেকে গুলি ছোড়েন। পরে পুলিশও ব্যালাস্টিক পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়, রনির পিস্তলের গুলিতেই ইয়াকুব ও হাকিমের মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ সামছুন নাহার ২০১৬ সালের ৬ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু করেন।
রনির গাড়ি চালক ইমরান ফকিরকেও এ মামলায় গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তবে সাক্ষী হওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়।
গত ৮ অক্টোবর ইমরান ফকির আদালতে তার সাক্ষ্যে বলেন, ওই রাতে সোনারগাঁও হোটেল থেকে রনিকে নিয়ে তিনি যখন মগবাজার মোড় হয়ে ইস্কাটনের বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। সে সময় ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের জন্য রাস্তার একপাশ বন্ধ ছিল।
“আমাদের গাড়ির বাঁ দিকে ও পেছনে দুটি ট্রাক ছিল। রাস্তায় ছিল জ্যাম। জ্যামে আটকা থাকা অবস্থায় রনি সাহেব এক পর্যায়ে হাত বের করেন। এর কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ শোনা যায়।”