বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) নামের এক সংগঠনের মানববন্ধনে এ দাবি করেন বিচারপতি সিনহার সাবেক এই সহকর্মী।
তিনি বলেন, “আমাদের সংবিধান অনুযায়ী, আইন অনুযায়ী, একমাত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতি ছাড়া সকলের অপরাধের বিচার হওয়ার বিধান রয়েছে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এসেছে এবং এসব অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণও রয়েছে।”
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে থাকা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা গত ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন।
প্রধান বিচারপতি দেশ ছাড়ার পরদিনই সুপ্রিম কোর্টের বিরল এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিচারপতির সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, অর্থ পাচার ও নৈতিক স্খলনসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
সহকর্মীরা এর ব্যাখ্যা চাইলে গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা বিচারপতি সিনহা দিতে পারেননি। এ কারণে তারা অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত একই বেঞ্চে বসতে রাজি নন বলে জানানো হয় বিবৃতিতে।
এপর ১৮ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, তার অনুসন্ধান হবে এবং তা দুদকের মাধ্যমে করা হতে পারে।
আইনমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের সূত্র ধরে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারক শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, “এই অভিযোগ নির্বিচারে যেতে পারে না। আইনমন্ত্রী বলেছেন, এগুলোর তদন্ত হবে এবং বিচার হবে। আমরা আশা করি, আইনমন্ত্রীর এই কথা ঠিক থাকবে।”
তিনি দাবি করেন, “তার (বিচারপতি সিনহা) বিরুদ্ধে যখন তদন্ত ও বিচার হবে, তখন তাকে ফরিয়ে আনতে হবে। সরকারের কাছে জোর দাবি থাকবে, যখন তার বিরুদ্ধে তদন্ত, বিচার হবে তখন সে যে দেশেই থাকুক, তাকে যেন ফিরিয়ে আনা হয়।”
২০১৫ সালের অক্টোবরে আপিল বিভাগ থেকে অবসরে যাওয়া বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বিভিন্ন সময়ে বিচারপতি সিনহার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে আলোচনায় এসেছেন। সংবিধান লঙ্ঘন, শপথভঙ্গ ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে তিনি রাষ্ট্রপতিকে চিঠিও দিয়েছেন।
বুধবারের মানববন্ধনে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, “প্রধান বিচারপতির দুর্নীতির কারণে বিচার বিভাগের মান-মর্যাদা নষ্ট হবে তা হতে পারে না। এই কারণেই তার সহকর্মীরা, অর্থাৎ আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আদালতে বসতে অসম্মতি জানিয়েছেন।”
তার ভাষায়, ওই পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কারণেই বিচরপতি সিনহা ‘বাধ্য হয়েছেন’ ছুটি নিতে।
“শুধু তাই নয়, তিনি দেশ থেকে পালিয়েছেন। তিন বছরের ভিসা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছেন।”
“১১ অভিযোগের মধ্যে চার কোটি টাকা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার কথা রয়েছে, যা তিনি পরে তুলে নিয়েছেন। ট্যাক্স রিটার্নে প্রতারণা, অস্ট্রেলিয়া-কানাডায় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমা করা, সিঙ্গাপুরে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমা করা, কয়েকজন ব্যবসায়ীর মামলায় ৬০ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়া, নিম্ন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, পদায়নের জন্য ঘুষ নেওয়ার কথা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, কালক্রমে সেগুলোর সাক্ষ্যপ্রমাণ এসে যাবে।”
অগাস্টের শুরুতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজের পর্যবেক্ষণের অংশে দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।
তার পর থেকেই ওই রায় এবং পর্যবেক্ষণ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করে আসছেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে ‘খাটো করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের দাবিও তোলেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা।
বিচারপতি সিনহা ‘ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছেন’ মন্তব্য করে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, “তার (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) সম্পর্কে যে কথাগুলো বলেছেন, সে কারণেই তার বিচার হওয়া উচিৎ। শুধু দুর্নীতির কারণে নয়, তার ওই উক্তি, আমি মনে করি দেশদ্রোহিতার সমান। এই জন্য আমি মনে করি, তার বিচার হওয়া বাঞ্ছনীয়।”
‘আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, প্রধান বিচারপতির অভিযোগেরও যেন বিচার হয়’ স্লোগান নিয়ে এই মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বোয়াফের সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময়, আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান আলম সাজু, ব্যরিস্টার সোহরাব খান, জয়বাংলা মঞ্চের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী বক্তব্য দেন।