উবার ও পাঠাও-এর মতো যাত্রী সেবাদানকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং মোটরযানের জন্য বিআরটিএ থেকে ‘তালিকাভুক্তির সনদ’ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রেখে নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার।
Published : 26 Sep 2017, 06:09 PM
এই ধরনের সেবা দিতে হলে টিআইএনধারী পাবলিক বা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে এবং কোম্পানির সব ধরনের শর্ত মেনে চলতে হবে।
রাইড শেয়ারিং সেবায় যুক্ত হতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর কমপক্ষে ২০০ মোটরযান থাকতে হবে। এছাড়া ভাড়ায় চালিত নয় এমন মোটরকার, জিপ, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্স ও মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং সেবার আওতায় থাকবে।
এসব বিষয় রেখে ব্যক্তিগত যানবাহনের মাধ্যমে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা-২০১৭’র খসড়া তৈরি করেছে সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল মালেক।
তিনি মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মন্ত্রণালয়ে যে কাজ ছিল তা শেষ।
“এটা (খসড়া নীতিমালা) তো কেবিনেট বৈঠকে পাঠানো হবে। জাস্ট তার আগের পর্যায়ে আছে। এটা মন্ত্রণালয় ফাইনালাইজড করবে। মন্ত্রী মহোদয় অনুমোদন দিলে তারপর তা কেবিনেটে পাঠানো হবে।”
নীতিমালার খসড়াটি ওয়েবসাইটে প্রকাশের পর ২৮০টি মতামত পাওয়া গেছে জানিয়ে সচিব মালেক বলেন, সেসব মতামতের কয়েকটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে।
বিআরটিএ প্রথমে স্যামকে তাদের কার্যক্রম বন্ধের নোটিশ দেয়। পরে উবারকেও একই ধরনের চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়, বাংলাদেশের আইনে তাদের ওই কার্যক্রম নিষিদ্ধ। এরপর ২৯ নভেম্বর উবার ও স্যাম-এর প্রতিনিধিরা বিআরটিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেন।
এরপর মোবাইল অ্যাপভিত্তিক যাত্রীসেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নীতিমালার আওতায় আনতে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খসড়া তৈরি শুরু করে বিআরটিএর।
বিআরটিএর এনফোর্সমেন্ট বিভাগের পরিচালককে প্রধান করে একটি কমিটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে। গত ২১ জুন এটি বিআরটিএ থেকে সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
খসড়া নীতিমালায় যা আছে
>> রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পরিচালনার জন্য বিআরটিএ থেকে রাইড শেয়ারিং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে ‘রাইড শেয়ারিং এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ এবং মোটরযান মালিককে রাইড শেয়ারিং এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ নিতে হবে।
>> রাইড শেয়ারিং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে টিআইএনধারী পাবলিক বা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে এবং পাবলিক বা প্রাইভেট কোম্পানির সব ধরনের শর্ত মেনে চলতে হবে।
>> যাত্রী চাহিদা, সড়কের ধারণ ক্ষমতা, রাইড শেয়ারিং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা, সেবাদাতা মোটরযানের সংখ্যার ভিত্তিতে রাইড শেয়ারিং সেবা এলাকা নির্ধারণ করবে বিআরটিএ।
>> রাইড শেয়ারিং সেবায় যুক্ত হতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কমপক্ষে ২০০ মোটরযান থাকতে হবে।
>> ভাড়ায় চালিত নয় এমন মোটরকার, জিপ, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্স এবং মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং সেবার আওতায় থাকবে।
>> হালনাগাদ রুট পারমিট থাকা সাপেক্ষে অটোরিকশা এবং ট্যাক্সিক্যাবসহ ভাড়ায় চালিত হিসেবে নিবন্ধন করা সব ধরনের যাত্রীবাহী মোটরযান রাইড শেয়ারিং সেবা দিতে পারবে। এক্ষেত্রে এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেটের প্রয়োজন পড়বে না।
>> রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে সরকারকে ১ লাখ টাকা ফি দিতে হবে। প্রতি বছর ১০ হাজার টাকা ফি দিয়ে তালিকাভুক্তির সনদ নবায়ন করতে হবে।
>> প্রতিটি মোটরসাইকেল এবং তিন চাকার যান রা্ইড শেয়ারিংয়ের তালিকাভুক্তিতে ৮০০ টাকা এবং অন্যান্য মোটরযানের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ফি দিতে হবে। তিনবছর পর তা নবায়ন করতে হবে।
>> রাইড শেয়ারিং সেবার ভাড়ার হার আপাতত সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে না। তবে যাত্রী অসন্তোষ হলে সেক্ষেত্রে সরকার ভাড়া নির্ধারণ করে দেবে।
প্রতিক্রিয়া
খসড়া নীতিমালার শর্তগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে উবার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,সরকারি নীতিমালা মেনেই যাত্রীসেবা দিতে প্রস্তুত প্রতিষ্ঠানটি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে উবার বলেছে, “সরকার ও আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে আমরা শহরগুলোতে অভিনব কিছু করার চেষ্টা করছি।
“উবার বাংলাদেশ লিমিটেড বাংলাদেশে একটি নিবন্ধিত কোম্পানি। তাই সরকারের দেওয়া সকল প্রকার নির্দেশ আমরা মেনে চলি।”
তবে নীতিমালার কিছু বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে শেয়ার অ্যা মোটরসাইকেল (স্যাম) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমতিয়াজ কাসেম।
মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক করায় তার আপত্তি না থাকলেও মোটরযানের তালিকাভুক্তির প্রয়োজন দেখছেন না তিনি।
ইমতিয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটা কোম্পানির ২০০ গাড়ি থাকার বিষয়টিও বাস্তবসম্মত নয়। রাইড শেয়ারিংয়ে কেন ফ্লিট থাকবে। ফ্লিট থাকবে ট্যাক্সি সার্ভিসে।
“রাইড শেয়ারিংটা তো ওপেন হবে। যে কোনো মালিক যে কোনো মুহূর্তে তার অ্যাপ ওপেন করতে পারে। সে একজন যাত্রীকে সেবা দিতেও পারে, নাও পারে।এটা হতে হবে স্বাধীন। যে ইচ্ছা করলে চালাবে, কেউ ইচ্ছা করলে চালাবে না।”
মোটরযান মালিকদের কাছ থেকে টাকা না নিয়ে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সেই টাকাটা আদায় এবং তালিকাভুক্তির জন্য ফি না রেখে প্রতিটি রাইড থেকে একটা নির্দিষ্ট হারে অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা রাখা বাধ্যতামূলক করলে সরকার লাভবান হবে বলে মনে করেন তিনি।