বিক্ষোভে পুলিশের টিয়ার শেলের আঘাতে অন্ধ হতে চলা রাজধানীর তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমানের চিকিৎসার ভার নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন প্রগতিশীল ছাত্রজোট।
Published : 24 Jul 2017, 06:03 PM
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর ক্যান্টিনে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চার এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জি এম জিলানী শুভ বলেন, “সাত কলেজের সমস্যা নিরসনে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে পুলিশ বর্বরোচিতভাবে লাটিপেটা-টিয়ার শেল ও রবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
“পুলিশের ছেড়া টিয়ার শেলে সিদ্দিকুর রহমান নামে তিতুমীর কলেজের ছাত্রের ছোখ জখম হয়। বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশের এ হীন কর্মের জন্য তীব্র ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
সিদ্দিকুরের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে ওই ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে অধিভুক্ত ঢাকার সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সময় সূচি ঘোষণা না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার শাহবাগে কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে লাটিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। তখন সিদ্দিকুরের চোখে টিয়ার শেলের আঘাত লাগে। তিনি এখন দুটি চোখই হারাতে চলেছেন।
জিলানী শুভ বলেন, কলেজগুলোর সেশনজট ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন এবং শিক্ষার মান উন্নয়নের ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে তার ওপর দায়িত্ব দেয়। কিন্তু দুই দশক পার হয়ে গেলেও কলেজের শিক্ষার মানের উন্নতি তো হয়নি বরং বহুলাংশে কমেছে।
“এখন এসব কলেজগুলো পুনরায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালনার কথা ভাবছে সরকার। কিন্ত সরকার ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষাবিদদের মতামতের তোয়াক্কা করেননি। নিজের মর্জিমাফিক একেক সময়ে এক এক সিদ্ধান্ত ছাত্রদের উপর চাপিয়ে দিয়ে গিনিপিগে পরিণত করেছে।”
সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে ফল ও পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ, একাডেমিক-প্রশাসনিক চূড়ান্ত নীতিমালা ঘোষণা ও উচ্চ শিক্ষার জন্য পরিপূরক অবকাঠামো নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচিও দিয়েছে ছাত্রজোট।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের একাংশের সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা, অন্য অংশে সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তাফা ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির ও ছাত্র ঐক্য ফোরামের সদস্য রফিকুল ইসলাম অভি উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সাত কলেজের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে যারা উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তারা কেউই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নন বলে দাবি করেছেন তিতুমীর কলেজের ছাত্র রিয়াজ মাহমুদ।
সোমবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনের সংবাদ সম্মেলনে রিয়াজ বলেন, “সাতটি দাবি নিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছি। কিন্তু এর দ্বিতীয় দিন রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাত কলেজের অধ্যক্ষ ও কিছু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে আমরা অবগত হয়েছি।
“সেই বৈঠকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি না থাকলেও তাদেরকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তারা কেউ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে না।”
এই সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা কলেজের আল আমিন হোসেন, ইডেন কলেজের নবীনা আক্তার ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের আসাদুজ্জামান নূর উপস্থিত ছিলেন।