যশোরে যে পরিবহনের বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে নাটকীয়ভাবে উদ্ধার করা হয়েছিল, সেই হানিফ এন্টারপ্রাইজের খুলনা শিববাড়ী কাউন্টারের ম্যানেজার নাজমুস সাদাত সাদী ঢাকায় এসে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
Published : 06 Jul 2017, 06:40 PM
ঢাকার মহানগর হাকিম খুরশিদ আলম বৃহস্পতিবার বিকালে তার খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় সাদীর বিচারিক জবানবন্দি রেকর্ড করেন বলে আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই নিজাম উদ্দিন জানান।
তিনি জানান, এই অপহরণ মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. মাহবুবুল হক ঘটনার সাক্ষী হিসেবে সাদীকে আদালতে হাজির করে জবানবন্দি নেওয়ার আবেদন করেন।
“নাজমুস সাদাত সাদী তার সেদিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বিচারকের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন।”
ডানপন্থি অধিকার কর্মী হিসেবে পরিচিত কবি প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার সোমবার ভোরে ঢাকার শ্যামলীর রিং রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে ‘অপহৃত’ হন বলে তার পরিবারের অভিযোগ।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে অনুসন্ধান শুরু করে এবং রাতে যশোরে হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের কথা জানায় র্যাব।
তার আগেই ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার আদাবর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন, যা পরে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে পুলিশ।
যশোর থেকে ঢাকায় নিয়ে আসার পর ফরহাদ মজহারকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তিনি হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় বিচারিক জবানবন্দি দেন এবং বিচারকের কাছ থেকে নিজের জিম্মায় বাড়ি ফেরার অনুমতি পান। রাতে তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা।
আর মামলায় বলা হয়, সেদিন ভোর ৫টার দিকে ঘুম ভেঙ গেলে ফরহাদ মজহারকে না দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন ফরিদা। সকাল ৫ টা ২৯ মিনিটে তিনি স্বামীর ফোন থেকে কল পান। ফরহাদ মজহার তাকে ‘ভয়ার্ত কণ্ঠে’ বলেন, ‘ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, মেরে ফেলবে’। এরপর ফোনটি কেটে যায়।
পরে পুলিশের উপস্থিতিতেই সারা দিনে ফরহাদ মজহারের ফোন থেকে আরও চার বার কল পান ফরিদা। সেসব ফোনালাপে ফরহাদ মজহার জানান, অপহরণকারীরা ৩৫ লাখ টাকা চেয়েছে।
ওইদিন রাতে যশোরের বাসে ফরহাদ মজহারের খোঁজ পাওয়ার আগে খুলনা নিউ মার্কেট এলাকার ‘নিউ গ্রীল হাউস’র মালিক আব্দুল মান্নান দাবি করেন, তার রেস্তোরাঁয় ফরহাদ মজহার ভাত খেয়েছেন।
পরে টিভিতে ফরহাদ মজহারের ছবি দেখে তিনি র্যাবকে খবর দিলে রাত সাড়ে ১১টার দিকে যশোরের নওয়াপাড়ায় খুলনা থেকে ঢাকাগামী একটি বাস থামিয়ে শেষের সারির আসনে ফরহাদ মজহারকে পায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
খুলনার শিববাড়িতে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ব্যবস্থাপক নাজমুস সাদাত সাদী পরদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ফরহাদ মজহার সেদিন তার কাউন্টার থেকে ‘গফুর’ নামে টিকেট কাটেন। সোয়া ৯টার দিকে কোচটি রয়্যাল মোড় শিববাড়িতে এলে ফরহাদ মজহার গাড়িতে ওঠেন।
টিকেট বিক্রির সময় ফরহাদ মজহারকে চেনেননি জানিয়ে সাদী সেদিন বলেছিলেন, র্যাব সদস্যরা ছবি দেখানোর পর তিনি চিনতে পারেন।
ওই বাসের যাত্রী চিত্রনির্মাতা শাহরিয়ার পলক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রাত পৌনে ১১টার দিকে নওয়াপাড়ায় বাস থামিয়ে সুপারভাইজার বলেন, তারা যাত্রী ফেলে এসেছেন, সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে।
তার ৪০ মিনিট পর র্যাব-পুলিশের গাড়ি আসে এবং ৭/৮ জন বাসে উঠে তল্লাশি করে শেষ আসনে ফরহাদ মজহারকে ঘুমন্ত অবস্থায় পায়।
ফরহাদ মজহারের পরনে তখন সাদা পাঞ্জাবি, নীল চেকের লুঙ্গি এবং মাথায় পাগড়ির মতো সাদা কাপড় প্যাঁচানো ছিল। সঙ্গে কাপড়ের একটি ব্যাগও ছিল বলে জানান শাহরিয়ার।
তবে যশোরে তাকে বাস থেকে যেভাবে উদ্ধার করা হয়েছে, তাতে অপহরণের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি জানিয়ে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের উপ মহাপরিদর্শক দিদার আহম্মেদ বলেছিলেন, এটা ‘অপহরণের নাটক’ বলে মনে হয়েছে তাদের।