আইনি লড়াই চালিয়ে পদে ফেরার এক মাস না গড়াতেই ফের বরখাস্ত করা হল গাজীপুরের মেয়র এম এ মান্নানকে।
Published : 06 Jul 2017, 05:05 PM
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এই বিএনপি নেতাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের এক মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় আইন অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মান্নান ২০১৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে হারিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন।
কিন্তু এরপর নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি তিনি। এই নিয়ে তিন দফা বরখাস্ত হলেন তিনি। নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তাকে কারাগারেও থাকতে হয়েছিল কিছু দিন। এক মামলায় মুক্তির পর আরেক মামলায়ও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাকে।
বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব পালন করতে না দেওয়ার উদ্দেশ্যেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার মান্নানকে বরখাস্ত করছে।
নাশকতার এক মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার পর ২০১৫ সালের ১৯ অগাস্ট মান্নানকে প্রথম বরখাস্ত করেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। উচ্চ আদালতে ওই আদেশ স্থগিত হলে ২৮ মাস পর পদ ফিরে পেয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু চেয়ারে বসতে না বসতেই আরেক মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গৃহীত হলে গত বছরের ১৮ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে গেলে পক্ষে আদেশ পান এই বিএনপি নেতা। এরপর গত ১৮ জুন পুনরায় মেয়রের চেয়ারে বসেন তিনি। তার ১৮ দিনের মধ্যে তাকে ফের বরখাস্ত করল সরকার।
মেয়রের আইনজীবী গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর মোর্শেদ প্রিন্স বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এনিয়ে এম এ মান্নান তৃতীয়বারের মতো বরখাস্ত হলেন। এর আগে নাশকতার মামলায় ২০১৫ সালের ১৯ আগস্ট প্রথম এবং ২০১১৬ সালের ১৯ এপ্রিল দ্বিতীয় দফা বরখাস্ত হয়েছিলেন তিনি।”
মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর সাবেক প্রতিমন্ত্রী মান্নান প্রায় ২৮ মাস কারাগারে ছিলেন জানিয়ে তার আইনজীবী বলেন, “বাসে পেট্রোল বোমা হামলার মামলায় ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় উনাকে ঢাকার বারিধারার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা রয়েছে। সবক’টি মামলায় তিনি জামিন নিয়েছেন।”
এবারের বরখাস্তের ক্ষেত্রে যে মামলাটির উল্লেখ করা হয়েছে, তা মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে অর্থ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নিয়ম ভাঙার অভিযোগে করে দুদক।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সিটি করপোরেশনের ত্রাণ ও দরিদ্র তহবিলের আয় কোনো ব্যাংক হিসাবে না রেখে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ‘ক্যাশ-ইন-হ্যান্ড’ হিসেবে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. গোলাম কিবরিয়ার কাছে রাখেন মেয়র মান্নান।
“পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ এবং টাকা গ্রহীতার স্বাক্ষরবিহীন ৯৯৯টি ভুয়া ভাউচার তৈরি করে সিটি করপোরেশনের ৪৯ লাখ ১ হাজার ৮৪৮ টাকা আত্মসাৎ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।”
এই মামলার তদন্ত শেষে দুদকের অভিযোগপত্র গত জানুয়ারিতে গাজীপুরের বিশেষ জজ আদালতে গৃহীত হয়েছে বলে জানানো হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. সামসুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত ১২ জানুয়ারি গাজীপুরের বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ১৮ জানুয়ারি তা আদালত কর্তৃক গৃহীত হয়।
ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়ায় স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী মেয়র মান্নানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
এতে আরও বলা হয়, “ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মান্নান অভিযুক্ত হয়েছেন এবং অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হয়েছে, যা সিটি করপোরেশনের মেয়রের নৈতিক মানদণ্ড ও ভাবমূর্তি পরিপন্থি এবং এ অবস্থায় মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নৈতিক মনোবল ক্ষুণ্ন হওয়া, সাক্ষ্য প্রমাণাদি বিনষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রভাবিত হওয়ার যৌক্তিক আশঙ্কা রয়েছে।”
একই মামলার আসামি সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়াকে গত বছরের ৮ নভেম্বর সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।
বিএনপির মান্নান মেয়র নির্বাচিত হলেও গাজীপুরের বেশির ভাগ ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা আওয়ামী লীগের।
বৃহস্পতিবার বিকালে বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন পৌঁছার আগে সকালে মেয়র মান্নান সিটি করপোরেশনের মাসিক সভা আহ্বান করেছিলেন। কিক্ত নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলররা সভা বয়কট করেন। তখন কোরাম সঙ্কটের কারণে মেয়র সভাটি মুলতবি করেন বলে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা জানান।