একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগামী দেড় বছরের কাজের খসড়া সূচি ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।
Published : 24 May 2017, 11:27 AM
২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে ভোট শেষ করতে এ বছরের জুলাই থেকে আগামী বছর ভোটের তফসিলের আগ পর্যন্ত সময়ের করণীয় ঠিক করা হয়েছে এই রোডম্যাপে। সেক্ষেত্রে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবরের পর শুরু হবে নির্বাচনের সময় গণনা।
নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশনের পাঁচ বছর মেয়াদের প্রথম সাড়ে তিন মাসের মাথায় এ রূপরেখা এল।
সিইসি মঙ্গলবার বলেছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় সরকারের মেয়াদপূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি তাদের থাকছে। ২০ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির শেষার্ধের মধ্যে যে কোনোদিন ভোটের তারিখ রাখা হবে। সব বিবেচনায় নিয়ে ‘যথাসময়ে’ ঘোষণা করা হবে তফসিল।
নির্বাচনকে কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত রেখে সবার জন্যে সমান সুযোগ তৈরিতে সবার মতামত নেওয়ার কথাও বলেছেন নূরুল হুদা।
অংশীজনের মতামত নিতে সংলাপ, আইনি সংস্কার, সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাস, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে চূড়ান্ত মুদ্রণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে সূচি ঠিক করা হয়েছে রোডম্যাপে।
এ কর্মযজ্ঞ এগিয়ে নিতে চার নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে আলাদা চারটি কমিটি করা হয়েছে বলে জানান সিইসি।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দল, গণমাধ্য, সুশীল সমাজ, সাবেক সিইসি ও ইসিসহ সবার সঙ্গে বসার আগে নিজেরাই প্রস্তাবিত এজেন্ডা নিয়ে কাগজপত্র তৈরি করা হবে। এর ওপর মতামত দেবেন অন্যরা। সবার সুপারিশ, প্রস্তাব পেলে তা পর্যালোচনা করে আমরা করণীয় নির্ধারণ করব।”
এ বছরের জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান সিইসি।
প্রশাসনিক অখণ্ডতা বজায় রেখে ভোটার সংখ্যার যথাসম্ভব সমতা আনতে ৩০০ আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের কাজটি আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে চায় ইসি।
নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রত্যাশীদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হবে আগামী অক্টোবরে। শর্ত পূরণ হয়েছে কিনা তা জানুয়ারিতে যাচাই শেষে মার্চে যোগ্যদের নিবন্ধন দেওয়ার কাজ শেষ হবে।
তফসিল ঘোষণার অন্তত ২৫-৩০ দিন আগে প্রায় অর্ধ লক্ষ ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করবে ইসি। পাশাপাশি কয়েক লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ শেষ করা হবে ভোটের অন্তত এক সপ্তাহ আগে।
ইসির রোডম্যাপ
>> সংলাপ: ২০১৭ মধ্য জুলাই থেকে নভেম্বর ২০১৮
>> আইন সংস্কার: ২০১৭ জুলাই-ফেব্রুয়ারি ২০১৮
>> সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস: ২০১৭ আগস্ট-এপ্রিল ২০১৮
>> নতুন দল নিবন্ধন: ২০১৭ অক্টোবর-মার্চ ২০১৮
>> ভোটার তালিকা: হালনাগাদ শুরু সেপ্টেম্বর ২০১৭, জানুয়ারিতে চূড়ান্ত প্রকাশ, অগাস্ট ২০১৮ এ মুদ্রণ (তফসিলের আগে সংসদীয় আসন অনুযায়ী ৩০০ এলাকার তালিকা প্রস্তুত)।
>> ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ: ২০১৮ জুন-অগাস্ট; তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে গেজেট প্রকাশ।
>> প্রশিক্ষণ: ২০১৮ জুলাই থেকে তফসিল ঘোষণা ও ভোটের আগ পর্যন্ত চলবে।
>> ইভিএম: একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়েও যুগপৎ কাজ করে যাবে নির্বাচন কমিশন। এ বছরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সিইসি নূরুল হুদা বলেন, “ইভিএম আগেও ছিল, মাঝখানে স্তিমিত হয়েছে। এখন নতুনভাবে তা কাজে লাগাতে আমরা কাজ করছি। এ প্রযুক্তির নানা দিক সবার কাছে উপস্থাপন করা হবে। সবার সায় পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেব। কোনো রাজনৈতিক দল আপত্তি করলে তা নিয়ে আমরা রিস্ক নেব না। এজন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।”
কোনো বিষয় চাপিয়ে না দিয়ে আসন্ন সংলাপে দলগুলোর মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।
চার কমিটি
কে এম নূরুল হুদা জানান, নির্বাচন সামনে রেখে বিশাল কর্মযজ্ঞ গুছিয়ে নিতে চারটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি করা হয়েছে। ইসি সচিব ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের এ কমিটিতে রাখা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতি; নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম সীমানা পুননির্ধারণ; নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ভোটার তালিকা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও স্মার্টকার্ড প্রস্তুতি এবং নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম আইন সংস্কার কমিটির প্রধান থাকবেন।
ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাচিবিক দায়িত্বে থাকছেন।