মোবাইল ফোন কোম্পানির টাওয়ার থেকে নিঃসৃত বিকিরণের (রেডিয়েশন) মাত্রা ও স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে তিনটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মূল্যায়ন প্রতিবেদন নিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 28 Mar 2017, 05:29 PM
এই তিন সংস্থা হলো- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউ), আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ও ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন নন-আইওনাইজিং রেডিয়েশন প্রটেকশন (আইসিএনআইআরপি)।
সংস্থার তিনটির কাছ থেকে বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন প্রতিবেদন নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে সে বিষয়ে হলফনামা আকারে অগ্রগতির প্রতিবেদন আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে জমা দিতে বলেছে আদালত।
এর সঙ্গে ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশে থাকা ‘বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নীতিমালা’ বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে- তাও ওই দিনের মধ্যে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।
মোবাইল ফোনের টাওয়ারের বিকিরণ নিঃসরণ নিয়ে পাঁচ বছর আগে করা এক রিট আবেদনের শুনানির সময় সম্পূরক আরেকটি আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ; বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।
রাষ্ট্রপক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী জিনাত হক।
চার বছর আগের এই প্রতিবেদন এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে বিটিআরসি এ পর্যন্ত কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চায় আদালত।
জবাবে রেজা-ই-রাকিব বলেন, “একটি গাইডলাইন (নীতিমালা) করছে। খসড়া হয়েছে। আজকেই কমিশনের মিটিংয়ে বিষয়টি উঠবে বলে জানি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই হয়ে যাবে আশা করি।”
মোবাইল ফোনের টাওয়ার থেকে বিকিরণ নিয়ে ২০১২ সালে জনস্বার্থে এই রিট আবেদন করে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।
তখন আদালত আনবিক শক্তি কমিশনকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার কয়েকটি মোবাইল টাওয়ার পরীক্ষা করে বিকিরণের পরিমাণ জানাতে বলে। সে সঙ্গে বিকিরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়।
২০১৩ সালে আদালতে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে আনবিক শক্তি কমিশন বলে, উপযুক্ত যন্ত্রপাতি না থাকার কারণে তারা সঠিকভাবে বিকিরণ নিরূপণ করতে পারেনি।
তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন জমা তখন জমা দেয়নি, সেটা চার বছর মঙ্গলবার আদালতে উপস্থাপন করা হয় বলে জানান রেজা-ই রাকিব।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় গত সপ্তাহে সম্পূরক আবেদনটি করা হয়েছিল। আদালত শুনানি নিয়ে সে আবেদন গ্রহণ করেছে।
এর আগে গত ২২ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ হাই কোর্টে মৌখিকভাবে জানায়, বাংলাদেশে মোবাইল ফোন কোম্পানির টাওয়ার থেকে নিঃসৃত রেডিয়েশন (বিকিরণ) এর মাত্রা উচ্চ পর্যায়ের, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
সারা দেশে ৬টি টাওয়ার পরীক্ষা করে একটিতে উচ্চমাত্রার বিকিরণ পাওয়া যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে নিয়মিতভাবে বিকিরণ পর্যবেক্ষ, নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য বিটিআরসিকে সুপারিশ করে বিশেষজ্ঞ কমিটি।
সেদিন আদালত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটি আগামী ২৮ মার্চের মধ্যে হলফনামা আকারে জমা দিতে নির্দেশ দেয় রাষ্ট্রপক্ষকে।
এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি কী পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটিও এর মধ্যে আদালতকে জানাতে নির্দেশ দিয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য রাখা হয়।
সে অনুযায়ী আদালত মঙ্গলবার আদেশ দেয়।