গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জমি থেকে উচ্ছেদের সময় সাঁওতালদের ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিমের তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে হাই কোর্টে।
Published : 30 Jan 2017, 08:46 PM
সাঁওতালদের ঘরে আগুন: বিচারিক হাকিমকে তদন্তের নির্দেশ
সাঁওতাল পল্লীতে পুলিশের আগুন দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল
সাঁওতালপল্লীতে বিচারিক হাকিম ও পিবিআইয়ের তদন্ত শুরু
ক্ষমা চাইলেন গাইবান্ধার এসপি, তদন্তের সময় বাড়ল
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. শহিদুল্লাহ রোববার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ওই প্রতিবেদন দাখিল করেন।
“রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের গ্রহণ করা ওই প্রতিবেদনের প্রাপ্তি স্বীকারের অনুলিপি আমাকে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মূল প্রতিবেদন ৬৫ পৃষ্ঠার। তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক আরও ১০০১ পৃষ্ঠার কাগজ-পত্র জমা দেওয়া হয়েছে।”
এই প্রতিবেদন মঙ্গলবার আদালতে শুনানির জন্য তোলা হবে বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জানান।
সাঁওতালদের ঘরে পুলিশের আগুন দেওয়ার একটি ভিডিও নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তুমুল আলোচনা শুরু হলে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর এই তদন্তের আদেশ দেয়।
উচ্ছেদ অভিযানে ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় কারা জড়িত এবং সেখানে পুলিশের কোনো সদস্য জড়িত কি না- তা তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিমকে।
ওই আদেশের পর গত ২৭ ডিসেম্বর গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. শহিদুল্লাহ সাঁওতাল অধ্যুষিত মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া গ্রামে যান এবং সব কিছু ঘুরে দেখে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল ও বাঙালি পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। আগুনে পোড়া ঘরের কিছু আলামতও তারা সংগ্রহ করেন। সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম ময়নুল হাসান ইউসুফ।
১৯৬২ সালে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল। ওই জমি ইজারা দিয়ে ধান ও তামাক চাষ করে অধিগ্রহণের চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে তার দখল ফিরে পেতে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা।
পরে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে বিরোধপূর্ণ চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে কয়েকশ’ ঘর তুলে বসবাস শুরু করে তারা। গত ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে।
সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। ওই ঘটনায় নিহত হন তিন সাঁওতাল, আহত হন অনেকে।
সংর্ঘষের পর গোবিন্দগঞ্জ থানার এসআই কল্যাণ চক্রবর্তী ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে সাড়ে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় চার সাঁওতালকে গ্রেপ্তার করার পর তারা জামিনে মুক্তি পান।
অন্যদিকে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুট ও উচ্ছেদের ঘটনায় মুয়ালীপাড়া গ্রামের সমেস মরমুর ছেলে স্বপন মুরমু গত ১৬ নভেম্বর অজ্ঞাতনামা ৬০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন; তার মামলায় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
দশদিন পর গত ২৬ নভেম্বর সাঁওতালদের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত টমাস হেমব্রম বাদী হয়ে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০০-৬০০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ দাখিল করেন। এছাড়া হাই কোর্টে দুটি রিট আবেদন হয়।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, সাঁওতাল পল্লীর ভেতরে পুলিশ সদস্যরা গুলি ছুড়ছেন। কয়েকজন পুলিশ সদস্য একটি ঘরে লাথি মারছেন এবং পরে এক পুলিশ সদস্য ওই ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেন। পুলিশের সঙ্গে সাধারণ পোশাকে থাকা আরেকজন আগুন অন্য ঘরে ছড়িয়ে দিতেও সহায়তা করেন।
ভিডিওর একটি অংশে আরও কয়েকটি ঘরে আগুন দিতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। তাদের মাথায় ছিল হেলমেট, একজনের পোশাকের পিঠে ডিবি, আরেকজনের পুলিশ লেখা ছিল।
এই প্রেক্ষাপটে এক রিট আবেদনকারীর সম্পূরক আবেদনে হাই বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয়। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত দুই সাঁওতালের অভিযোগ এজাহার হিসেবে নিয়ে পিবিআইয়ের মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারিক হাকিমের সঙ্গে একই দিনে পিবিআই ওই তদন্ত শুরু করে।
গত ১২ ডিসেম্বর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, সাঁওতালদের যেভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে তা আইনি প্রক্রিয়ায় হয়নি।