প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদনের পরে প্রাথমিকের একটি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে বাংলা নীতিবাক্য পাল্টে সেখানে অপ্রাসঙ্গিক শব্দে ভুল ইংরেজি বাক্য জুড়ে দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
Published : 09 Jan 2017, 09:54 PM
তৃতীয় শ্রেণির হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়ে ‘পরনিন্দা ভালো না’ বাক্যটি বাদ দিয়ে এনসিটিবির কর্মকর্তারা সেখানে ‘DO NOT HEART ANYBODY’ বাক্য জুড়ে দিয়েছে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
তবে এনসিটিবির কোন কর্মকর্তা এই তথ্য বিকৃতি করেছে তা কেউ জানাতে পারেনি। এনসিটিবির কোনো কর্মকর্তাও এনিয়ে মুখ খোলেননি।
এবারের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ছাপানোর সিদ্ধান্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কয়েকটি ছবি ও তার সঙ্গে ছাপানোর জন্য কিছু নীতিবাক্য বাছাই করে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তৃতীয় শ্রেণির হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ছাপানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ‘পরনিন্দা ভালো না’ বাক্যটি ঠিক করে দেয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদিত ওই বাক্যটি তৃতীয় শ্রেণির হিন্দু ধর্ম বইয়ে ছাপানোর জন্য এনসিটিবিতে পাঠানো হয়েছিল বলে জানান গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ।
তিনি সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলা বাক্যটি বাদ দিয়ে সেখানে DO NOT HEART ANYBODY বাক্য ছাপায় এনসিটিবি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদান হওয়া কোনো ইংরেজি বাক্যই ছিল না, এটা তদন্ত হওয়া উচিৎ।”
এ বিষয়ে কথা বলতে সোমবার এনসিটিবিতে গেলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা কোনো কথা বলেননি। এনসিটিবির কোনো কর্মকর্তাই এনিয়ে মুখ খোলেননি।
বছরের প্রথম দিন ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার ২০১ জন শিক্ষার্থীর হাতে এবার ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার বই ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করে সরকার।
গত ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই যাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ভুল-ক্রটি ধরে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনা চলছে। বানান ভুলের খতিয়ান তুলে ধরে অনেকে প্রশ্ন রেখেছেন- শিশুদের পাঠ্যবইয়ে এসব কী শেখানো হচ্ছে।
নতুন পাঠ্যবইয়ের ভুল নিয়ে ফেইসবুকে তীব্র সমালোচনার পর পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি করেছে এনসিটিবি। এই ভুলের জন্য প্রাথমিক তদন্তে সোমবার সংস্থাটির দুই কর্মকর্তাকে ওএসডি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে কুসুমকুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় বেশ কয়েকটি লাইন বিকৃতির বিষয়টি তুলে ধরে ফেইসবুকে তার সমালোচনা করেছেন অনেকে।
প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে বর্ণ পরিচয়ে লেখা হয়েছে, ‘ও’-তে ওড়না চাই; যা নিয়ে ফেইসবুকে চলছে তুমুল সমালোচনা।
২০১২ সালে নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী ২০১৩ সালে বিতরণ করা বইয়েও ‘ও’-তে ওড়না চাই বাক্যটি লেখা ছিল।
এবার প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে শুনি ও বলি পাঠে একটি ছাগলের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে, অজ (ছাগল) আসে। আম খাই।
এক সময় অ-তে অজগর শেখানো হলেও তার বদলে শিশুদের বইয়ে প্রায় অপ্রচলিত ‘অজ’ শব্দের ব্যবহার সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আবার আম খাওয়া বোঝাতে একটি আম গাছের নিচের অংশে দুই পা তুলে একটি ছাগলের দাঁড়িয়ে থাকায় ছবি দেওয়া হয়েছে সেখানে। এই ছবি নিয়ে কেউ কেউ ফেইসবুকে লিখেছেন, ছাগল নাকি গাছে উঠে আম খায়।