ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ে ঘাটতি আছে বলে স্বীকার করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ।
Published : 08 Jan 2017, 11:03 PM
সম্প্রতি দুদফা ভূমিকম্পে বাংলাদেশ কেঁপে ওঠার মধ্যে রোববার ঢাকার ব্র্যাক ইন সেন্টারে অ্যাকশনএইডের এক অনুষ্ঠানে আলোচকরা সমন্বয়হীনতার কথা তুললে তার এই স্বীকারোক্তি মেলে।
বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা রিয়াজ বলেন, “গত ১২০ বছরে আমাদের ভূমিকম্প মোকাবেলা করতে হয়নি। তাই আমাদের সরাসরি জ্ঞান কম। আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ে ঘাটতি আছে স্বীকার করতে হবে।”
তবে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে বলে দাবি করেন তিনি।
“ভূমিকম্প মোকাবেলায় যন্ত্রপাতি ছিল না বললেই চলে। গত ২-৩ বছরে প্রায় ২২০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। আগামীতে আরও প্রায় ৫০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হবে।”
দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে কর্মরত ১০টি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সংগঠন ‘নারি কনসোর্টিয়াম (ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর রিস্ক রিডাকশন অ্যান্ড রেসপন্স ইনিশিয়েটিভস)’ ‘ভূমিকম্পে সাড়াদান ও প্রস্তুতি : ঘাটতি ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
আলোচকরা আইন হওয়ার প্রায় ১০ বছর পরেও বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, এজন্য অপরিকল্পিতভাবে শহর এবং গ্রামে হচ্ছে ভবন নির্মাণ। অবকাঠামো ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।
বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, “বিল্ডিং কোড যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তবে ৯০ শতাংশ ঝুঁকি কমানো যায়। তাই ভবন নির্মাণ বিধিমালা প্রয়োগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
যে ভবনগুলো আছে, সেগুলোর যদি ঝুঁকি নিরূপণ না করা হয়, তবে দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের ভূমিকম্প অপেক্ষা করছে সতর্কবার্তা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান মাকসুদ কামাল।
তিনি বলেন, “বাস্তবতা হল বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প হবে সামনেই। দুঃখের বিষয়, ভবন নির্মাণ বিধিমালা এখনও আমরা প্রয়োগ করতে পারিনি। আমাদের সবচাইতে বড় কাজ হল সরকারের ভেতরের মানুষগুলোকে সচেতন করা।
“আমরা যারা বাইরে কাজ করি, তাদের সাথে সরকারের ভেতরে যারা কাজ করে, তাদের মধ্যে সমন্বয়ের বড় ফারাক আছে।”
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান বলেন, কর্তৃপক্ষের সঠিক দিক-নির্দেশনা না থাকার ফলে নিজেদের ভূমিকা নিয়েও তারা সংশয়ে থাকেন।
“প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় একেবারেই নেই। কাজ করতে গিয়ে দেখি রাজউক থাকলে তো ডিসিসি নাই, ডিসিসি থাকলে তো দুর্যোগ মন্ত্রণালয় নাই, সরকার থাকলে তো অন্যান্য প্রতিনিধিরা নাই। সমন্বয় খুবই দরকার।”
দুর্যোগ মোকাবেলার কাজে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করার সুপারিশ করেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম।
তিনি বলেন, “তৈরি পোশাক শিল্পে এখন নানা কাজ হচ্ছে ভূমিকম্প মোকাবেলায়। একইভাবে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সে কাজটি করতে হবে। আবার শুধু রাজউক বা সরকারের উপর ভরসা করলেও চলবে না।”
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন।
বাংলাদেশে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের মোকাবেলা এবং ঝুঁকির মাত্রা কমিয়ে আনতে সঠিক পরিকল্পনা না থাকার কথা তুলে ধরেন তিনি।
“সঠিক জ্ঞান ও পরিকল্পনার অভাবে সরকার, সিটি কর্পোরেশন, রাজউক ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় খুবই কম। অন্যদিকে সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে।”
বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা কম থাকার বিষয়টিও উঠে আসে প্রবন্ধে।