নারী উন্নয়নে কাজ করতে গিয়ে প্রতিপদে নানা প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি প্রশাসনের পুরুষ সহকর্মীদের কাছ থেকে নানা ধরনের অবহেলা ও অসহযোগিতা পাওয়ার অভিযোগ করেছেন উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত পদে নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধিরা।
Published : 30 Nov 2016, 09:19 PM
বুধবার রাজধানীতে নারী উন্নয়ন বিষয়ক শিখন ও মতবিনিময় কর্মশালায় এসব কথা বলেন উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যানরা।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে উপজেলা গর্ভন্যান্স প্রজেক্ট, ইউজেডজিপি আয়োজিত এ কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দিন আহমদ।
কর্মশালায় ঢাকা, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলার ৬৯টি উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যানরা অংশ নেন।
তাদের অভিযোগ, অধিকাংশ স্থানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নারী জনপ্রতিনিধিদের কাজের ক্ষেত্রগুলোয় প্রয়োজনীয় বরাদ্দ আটকে রেখে দায়িত্ব পালনে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেন না।
এ ধরনের ঘটনাকে উপজেলা চেয়ারম্যান দ্বারা নির্যাতন বলে মনে করেন কোনো কোনো নারী জনপ্রতিনিধি।
নারী ভাইস চেয়ারম্যানরা পদাধিকার বলে উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি।
নারী উন্নয়ন ফোরাম ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত বা সাধারণ আসনে নির্বাচিত মহিলা জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সংস্থা। এটি তৃণমূলে নারীর কর্মসংস্থান, নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে।
নারী জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মর্কতারা নারী উন্নয়ন ফোরামকেই মেনে নিতে পারছেন না।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান শেখ ফরিদা জাহান স্বপ্না অভিযোগ করেন, উপজেলার বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের ৩ শতাংশ নারী উন্নয়ন ফোরামের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় না।
তিনি বলেন, “গত অর্থবছরের বরাদ্দ আমাদের দেওয়া হয়নি। এবারের অর্থবছরের বরাদ্দও দেওয়া হয়নি। উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে বললে বলেন, ‘কিসের আবার নারী উন্নয়ন ফোরাম। আপনারা তো দেশই চালান’।
“ইউএনওর কাছে গেলে তিনি আমাদের বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া দেওয়া সম্ভব না’। আমরা ঘরে নির্যাতিত, বাইরে নির্যাতিত, উপজেলা চেয়ারম্যান দ্বারা নির্যাতিত। আমরা নিজেরাই যেখানে নির্যাতনের শিকার, সেখানে নারী উন্নয়নে কিভাবে কাজ করব।”
নারী উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ হওয়া তিন ভাগ অর্থ নারী উন্নয়ন ফোরামের ব্যাংক একাউন্টে দেওয়ার দাবি জানান নারী জনপ্রতিনিধিরা।
কিশোরগঞ্জের ভাইস চেয়ারম্যান কামরুন নাহার লুনা নারী উন্নয়ন ফোরামের বরাদ্দ ৩ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ৫ ভাগ করার আহ্বান জানান। বাল্য বিবাহ বন্ধে নারী উন্নয়ন ফোরামকে আর্থিক এবং প্রশাসনিক সহায়তা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা আক্তার লিপি অভিযোগ করেন, নারী উন্নয়ন ফোরামের একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ৫ শতাংশ ঘুষ দিতে হয়েছে।
“আমাদের যেকোনো প্রকল্পই হোক ৫ পার্সেন্ট না পেলে সে ফাইল ছাড়ে না।”
ওই নারী জনপ্রতিনিধি জানান, নারী উন্নয়ন ফোরামের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ফাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে ফোরামের চেয়ারম্যানের কাছে দিলে সময় ও সম্মান দুটিই বাঁচবে। কাজের বাস্তবায়ন দ্রুত হবে।
উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যানরা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে অংশ নিতে পারেন না জানিয়ে সেখানে অংশ নেওয়ার দাবি জানান তারা।
উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের অনেকে বিধবা-বয়স্ক ভাতার একটি অংশ নারী উন্নয়ন ফোরামকে দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
এছাড়া নারীদের জন্য উপজেলা ভিত্তিক প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করার, দুস্থ্য নারীদের জন্য সুদবিহীন ঋণ প্রদান, প্রতিবন্ধী নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আলাদা বরাদ্দ, বাল্যবিবাহ রোধে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক ও প্রশাসনিক সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানান উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যানরা।
কর্মশালায় ঢাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক শেখ মুজিবর রহমান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. আল আমিন এবং মো. নুরুন্নবী উপস্থিত ছিলেন।