মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন অভিযানের মুখে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশকে সীমান্ত খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
Published : 19 Nov 2016, 02:06 AM
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে বেসামরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে তাদের রক্ষার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
ইউএনএইচসিআর’র মুখপাত্র আড্রিয়ান এডওয়ার্ডস শুক্রবার জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতিও আবেদন জানাচ্ছি মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের সীমান্ত খোলা রাখা এবং সেখানে সংহিসতার মুখে পালিয়ে আসা বেসামরিক মানুষদের নিরাপদে ঢুকতে দেওয়ার জন্য।”
বাংলাদেশ লাগোয়া মিয়ানমারের এই রাজ্যটিতে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর সামরিক অভিযানে শতাধিক মানুষের প্রাণ হারানোর খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
অভিযানের মুখে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের অনেকে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টার প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি সীমান্তে বাড়তি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকারী অনেককে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা জানিয়েছেন বিজিবি কর্মকর্তারা।
ইউএনএইচসিআর’র মুখপাত্র মিয়ানমার সরকারকে তার দেশের সব মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বলে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
চলমান দমন অভিযানের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া হাজার হাজার মানুষের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে সেখানে ত্রাণকর্মীদের যেতে দেওয়ার অনুরোধও করেছেন তিনি।
“ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের জরুরি খাবার, আশ্রয় ও চিকিৎসা সেবা দরকার বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় নয় সীমান্ত পুলিশের মৃত্যু হয়। এরপরই আশেপাশের এলাকাগুলোতে ব্যাপক ধর পাকড় শুরু হয়। রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলাগুলোতে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান।
সেখানে ত্রাণকর্মী ও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না এবং গ্রামগুলোতে চিরুনি তল্লাশি অভিযান চলছে বলে রয়টার্সের খবর।
মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গারা কয়েক যুগ ধরে বাংলাদেশে আসছিল। বর্তমানে পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করছে বাংলাদেশ।
এর আগে ২০১২ সালে রাখাইনে বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে ভয়াবহ দাঙ্গার পর অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকতে চাইলেও তখন বাংলাদেশ সীমান্ত আটকে দিয়েছিল।
বাংলাদেশ সরকারের দাবি, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার ভার বহনের সঙ্গে নতুন আরও শরণার্থী নেওয়া অসম্ভব। তাছাড়া রোহিঙ্গা বাংলাদেশের নাগরিক সেজে বিভিন্ন দেশে গিয়ে অপরাধে জড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
ওই দাঙ্গার পর এবারই রাখাইন রাজ্যে সবচেয়ে মারাত্মক রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটছে বলে রয়টার্সের ভাষ্য্। পলায়নরত রোহিঙ্গাদের গুলি করা হচ্ছে বলেও তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা রয়টার্সকে বলেন, “স্থানীয়রা আমাকে বলেছে, নদীর পাড়ে প্রায় ৭২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। সেনাবাহিনী নদীর পাড়ে অপেক্ষারতদের ভিড়ের মধ্যে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।”