মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৩ বছর বয়সের নিচের কেউ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবে না বলে মঙ্গলবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক আদেশ জারি করেছে।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য’ তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
আদেশে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব ব্যক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।
“মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার বয়স ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে ন্যূনতম ১৩ বছর হতে হবে।”
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন যারা
>> যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন ট্রেনিং ও প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
>> যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছেন এবং যেসব বাংলাদেশি বিশিষ্ট নাগরিক বিশ্বে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।
>> যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত মুজিবনগর সরকারের অধীনে কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
>> সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, ইপিআর, আনসার বাহিনীর সদস্য যারা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন।
>> মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমএনএ এবং এমপিএ (গণপরিষদ সদস্য)।
>> পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী কর্তৃক নির্যাতিত নারীরা (বীরাঙ্গনা)।
>> স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশি সাংবাদিক।
>> স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়।
>> মুক্তিযুদ্ধকালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী মেডিকেল দলের ডাক্তার, নার্স ও সহকারী।
২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ২৫তম সভায় একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী এবং রাজাকারদের হাতে নির্যাতিত নারীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
একাত্তর সালে যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে ছিল, ওই সভায় তাদের বাদ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞাও ঠিক করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেমেছিল এক লাখের বেশি মানুষ, যার মধ্যে অনেক কিশোরও ছিল। এদের একজন ১৩ বছর বয়সী শহীদুল ইসলাম লালু বীর প্রতীক খেতাবও পেয়েছেন।
বয়স নির্ধারণের বিষয়ে মন্ত্রী ওইদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমরা হিসেব করেছি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অস্ত্র নিয়ে ট্রেনিং নিতে হলে তার বয়স ১৫ বছর না হলে রাইফেল চালানো শেখা স্বাভাবিকভাবে সম্ভব না।”