এক সপ্তাহ ধরে নানা পরিকল্পনা আর চেষ্টা করেও বাগে আনা যায়নি জামালপুরের সরিষাববাড়ীতে ঘুরে বেড়ানো বুনো হাতিটিকে।
Published : 10 Aug 2016, 05:28 PM
বুধবার সকালে ট্রাঙ্কুলাইজার বন্দুক থেকে চেতনানাশক ডার্ট ছোড়া হলেও তা হাতির গায়ে লাগানো যায়নি। উল্টো ডার্ট বেঁকে গেলে ক্ষিপ্ত হাতিটির তাড়ায় ক্ষান্ত দিতে হয়েছে দিনের অভিযানে।
হাতিটির বর্তমান অবস্থান সরিষাবাড়ীর সৈয়দপুর গ্রামের একটি চরে।
এর আগে গত সোম ও মঙ্গলবার দুই দফা হাতিটিকে অচেতন করার চেষ্টা করা হলেও সফল হয়নি। এর মধ্যে উদ্ধারকারী দল একবার পোষা হাতি নিয়ে কাছাকাছি গেলেও তাড়া খেয়ে ফিরে আসে। আরেকবার চেতনানাশক ডার্ট ছোড়া হলেও হাতির গায়ে লাগেনি।এছাড় শত শত উৎসুক মানুষের ভিড়ের কারণেও উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের একজন সহকারী ভেটিনারি সার্জন বুধবার সকালে হাতিটিকে চেতনানাশক ডার্ট ছোড়েন।
উদ্ধার দলে থাকা ভেটিনারি সার্জন সৈয়দ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল সাড়ে ৭টায় ধারাবর্ষা নামের চরে বুনো হাতিটিকে পাই আমরা। যোগাযোগ ও পরিবহনের সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে একটি রাস্তার কাছে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাছে পাই হাতিটিকে। তখনই প্লাস্টিক ডার্ট ছোড়া হয়।
এ কর্মকর্তা জানান, হাতিটির চামড়া বেশ পুরু। ৫০-৬০ হাত দূর থেকে ডার্ট ছুড়তে হয়েছে। সেটি হাতির গায়ে লাগলেও বেঁকে যায়।
“হাতিটির গায়ে ডার্টটি পুশ হওয়ার পরও কিছু সময় লাগে। সে সময়টুকু মেলেনি।”
হাতিটি উদ্ধারকারী দলের দিকে তেড়ে আসায় সেখান থেকে তাদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হয় বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, তাদের কাছে প্লাস্টিক ডার্ট, মেটাল ডার্ট ও কাঠের তৈরি এলিনজেট ডার্ট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
উদ্ধার দলে থাকা বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক বলেন, “হাতিটিকে শুধু অচেতন করলেই হবে না। তাকে সরানোর জন্য পরিবহন আনা ও রাস্তার কাছাকাছি জায়গা বেছে নেওয়ার বিষয় রয়েছে। বিকালে বা রাতে তা পাওয়া ও ম্যানেজ করা কষ্টসাধ্য হবে। এজন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চূড়ান্ত অভিযানের প্রচেষ্টা চালাব।”
বুনো হাতিটি উদ্ধারে সপ্তাহ খানেক অবস্থান করা ভারতীয় প্রতিনিধি দল বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিলেও কোনো ধরনের কারিগরি সহায়তা দেয়নি। খুলনা থেকে আনা মেটাল ডার্টটিও দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় এটির কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে বুনো হাতির খুব কাছ থেকে ট্রাঙ্কুলাইজের পরিকল্পনা নিয়েছেন বন কর্মকর্তারা।
বানের জলে ভেসে গত ২৬ জুন আসাম হয়ে দেশের কুড়িগ্রাম সীমান্তে আসে ভারতীয় বুনো হাতিটি। দেড়মাসেরও বেশি সময় ধরে চার জেলায় কয়েকশ’ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে অনেকটা দুর্বল হয়ে জামালপুরেই রয়েছে সে।
মধ্য অগাস্টে ফের বন্যার শঙ্কা থাকায় এর আগেই উদ্ধার কাজ শেষ করতে চান বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
বন অধিদপ্তরের শেরপুর অঞ্চলের বন কর্মকর্তা গোবিন্দ রায় বলেন, “আমাদের টিম সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বৃহস্পতিবারও যেন উদ্ধারচেষ্টা চালানো যায় সে প্রক্রিয়া চলছে। উপযুক্ত সময় পেলেই ট্রাঙ্কুলাইজ করে তাকে সরিয়ে আনা হবে।”
প্রশাসন ও পুলিশ, এলাকাবাসীর সহায়তা নিয়ে দ্রুত হাতিটি উদ্ধারের আশা রাখেন তিনি।
শারীরিক পরিস্থিতি দেখে হাতিটিকে গাজীপুরের সাফারি পার্কে কিংবা শেরপুরে গজনিতে বুনো হাতির সঙ্গে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।