সিটিসেল বন্ধ হবে কি না, সিদ্ধান্ত দেবে সরকার

বকেয়া পড়া পৌনে পাঁচশ কোটি টাকা শোধ করতে না পেরে খাদের কিনারে পৌঁছে যাওয়া দেশের একমাত্র সিডিএমএ মোবাইল অপারেটর সিটিসেল বন্ধ করে দেওয়া হবে কি না- সে বিষয়ে সরকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।   

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2016, 01:51 PM
Updated : 3 July 2017, 02:18 PM

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিটিসেলের একটি প্রতিনিধি দল দুদিন আগে বিটিআরসিতে গিয়েছিল জানিয়ে সংস্থার চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আলোচানার সারসংক্ষেপ সরকারের কাছে পাঠানো হবে। সরকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে- সিটিসেল বন্ধ হবে কি হবে না।

“পাওনা টাকা আমরা নেব কি নেব না তা- সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।”

বড় ধরনের সঙ্কটে পড়া সিটিসেলের গ্রাহক সংখ্যা কমতে কমতে জুন শেষে মাত্র ৭ লাখে ঠেকে; যা বাংলাদেশের মোট মোবাইল ফোন গ্রাহকের এক শতাংশেরও কম।

আর বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম পুনঃনিবন্ধন প্রক্রিয়ার পর বর্তমানে সিটিসেলের দেড় থেকে দুই লাখ গ্রাহক রয়েছে বলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের জানান।

টুজি তরঙ্গ ফি, বার্ষিক লাইসেন্স ফি, বার্ষিক তরঙ্গ ফি, রেভিনিউ শেয়ারিংসহ বিভিন্ন খাতে সিটিসেলের কাছে সরকারের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

বার বার তাগাদা দিয়েও ওই টাকা আদায় করতে না পেরে সিটিসেলকে ১৬ অগাস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে তরঙ্গ বাতিল ও অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে বিটিআরসি।

সিটিসেল যদি ওই সময়ের মধ্যে পাওনা টাকা দিয়ে সেবা চালিয়ে যেতে চায়, সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের বিষয়ে বিটিআরসির পদক্ষেপের কারণে কোম্পানিটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না এমন প্রশ্নে শাহজাহান মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সরকারের নির্দেশে সব করা হয়।”

আগামীতে নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের সুযোগ যেহেতু আসছে, সিটিসেল গ্রাহকদের সে পর্যন্ত সময় দেওয়া যেত কি না- এ প্রশ্নে বিটিআরসি প্রধান বলেন, “গ্রাহকের স্বার্থের বিষয়ে বিটিআরসি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়, সিটিসেলের ঘটনা দুঃখজনক। এ ঘটনায় কিছু গ্রাহকের অসুবিধা হবে বলে আমরা গ্রাহকের কাছেও দুঃখ প্রকাশ করেছি। ”

১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (বিটিএল) নামে টেলিকম সেবা পরিচালনার লাইসেন্স পায় বর্তমান সিটিসেল। পরের বছর হংকং হাচিসন টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে বিটিএল নাম বদলে হয় হাচসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল)।

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় আবার পরিবর্তন আসে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের মালিকানাধীন প্যাসিফিক মটরস ও ফারইস্ট টেলিকম মিলে এইচবিটিএল-এর শেয়ার কিনে নেয়। কোম্পানির নাম বদলে হয় প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড, ব্র্যান্ডিং শুরু হয় সিটিসেল নামে।

পরে ২০০৪ সালে এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে সিঙ্গাপুরের সিংটেল এশিয়া প্যাসেফিক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। বর্তমানে সিটিসেলের সবচেয়ে বেশি ৪৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে সিংটেলের হাতে। আর ফারইস্ট টেলিকম লিমিটেড ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক।

টুজি মোবাইল সেবার পাশাপাশি ফিক্সড লাইন ফোন সেবা দেওয়ার লাইসেন্স থাকলেও সিটিসেল কখনোই তাতে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। ২০১৩ সালে তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তির সেবার নিলামের জন্য যোগ্য বিবেচিত হলেও দুই কোটি ডলারের আর্নেস্ট মানি জমা দিতে না পারায় সিটিসেল থ্রিজি সেবা থেকে সরে আসে।

সঙ্কট কাটাতে সরকারের সহযোগিতা চান জানিয়ে সিটিসেলের সিইও মেহবুব চৌধুরী মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে। যে তরঙ্গ সিটিসেলের জন্য বরাদ্দ রয়েছে তা যেন সত্বর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় যাতে আমরা জিএসএম-এ যেতে পারি। প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই বাজারে বিনিয়োগ করতে গেলে কিছু ভরসা দিতে হবে বা ইনসেনটিভ দিতে হবে।”

বিটিআরসির সময় বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “নিয়ন্ত্রক সংস্থা আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, এটি বন্ধ হবে না। বিনিয়োগ আসছে জানিয়ে তাদের কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। তারা বলেছে সুবিবেচনা করে দেখবেন।”

বিটিআরসি কমিশনার জহিরুল হক এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আইন অনুযায়ী আমরা অগাস্টের ১ তারিখেই সিটিসেল বন্ধ করে দিতে পারতাম, তবে গ্রাহকের কথা বিবেচনা করেই সময় দেওয়া হয়েছে।”

অন্যান্য অপারেটরের কাছে সরকারের যে পাওনা রয়েছে তা আদায়ে বিটিআরসি কী উদ্যেগ নেবে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, “সবাইকে আমরা সমান দৃষ্টিতে দেখি, তবে সব সিদ্ধান্তই সরকার নিয়ে থাকে।”