‘জঙ্গি নেতা’ তামিম ‘দেশেই’

গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলার হোতা হিসেবে চিহ্নিত কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি তামিম চৌধুরী বাংলাদেশেই রয়েছেন বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা।

কামাল তালুকদার নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2016, 03:57 PM
Updated : 2 August 2016, 03:59 PM

কল্যাণপুরে গত ২৬ জুলাইয়ের অভিযানের আগেও তামিম দেশে ছিলেন বলে দাবি করেছেন ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

আইএসের কথিত সাময়িকী দাবিক-এর চতুর্দশ সংখ্যায় বাংলাদেশে তাদের নেতা হিসেবে যে আবু ইব্রাহিম আল হানিফের  সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছিল, সেই ইব্রাহিম আসলে তামিমই বলে গোয়েন্দাদের ধারণা।

তবে তামিমকে জেএমবির নেতা বলছে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক মঙ্গলবারও এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “নিউ জেএমবির নেতৃত্ব সে (তামিম) দিচ্ছে।”  

সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর করা নিখোঁজদের তালিকায় থাকা তামিম ভারতে অবস্থান করছেন বলে গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নয়া দিল্লি সফরের সময় টাইমস অফ ইন্ডিয়া খবর দিয়েছিল।

মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে আইজিপির সঙ্গে থাকা মনিরুল সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় বলেন, “কল্যাণপুরের ঘটনার আগেও বাংলাদেশে তামিমের অবস্থান জানা যায়।”

তামিম দেশ ত্যাগ করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সে দেশত্যাগ করেছে, এমন তথ্য আমাদের (গোয়েন্দা) কাছে নেই।”

কানাডার উইন্ডসরের বাসিন্দা তামিম ২০১৩ সালের অক্টোবরে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে আসার পর থেকে নিখোঁজ বলে জানান মনিরুল।

তখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি কেন- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, তখন তার জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানা যায়নি। তদন্তে ২০১৫ সালে তার নাম বেরিয়ে আসে।

তামিম চৌধুরী

তবে আইজিপি বলেন, “সে (তামিম) দেশে থাকতে পারে, দেশের বাইরেও থাকতে পারে। গুলশান ঘটনার আগে দেশেই ছিল।”

তিনি বলেন, তামিমের সঙ্গে জেএমবির ‘নতুন ধারার’ একটি গ্রুপ রয়েছে এবং তাদের পুলিশ ‘মোটামুটি’ চিহ্নিত করতে পেরেছে। তামিমকে গ্রেপ্তার করা গেলে ‘তার উপরে’ কে বা কারা আছে- তা জানা সম্ভব হবে।

গুলশান হামলাকারীদের তামিমই ‘রিক্রুট’ করেছিল দাবি করে শহীদুল হক বলেন, “ঘটনার আগে সে তাদের ব্রিফিং দিয়েছে, তাদেরকে পাঠিয়েছে এবং ঘটনার সময় তাদেরকে এগিয়ে দিয়েছে, আমরা সে তথ্য পেয়েছি।”

তিন সন্তানের জনক তামিম (৩০) সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রামের প্রয়াত আব্দুল মজিদ চৌধুরীর নাতি। মজিদ চৌধুরী একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে স্থানীয়দের তথ্য।

তামিমের বাবা শফি আহমদ জাহাজে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি সপরিবারে কানাডায় পাড়ি জমান। তামিমের জন্মও সেখানে।

গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর পুলিশের অভিযানে কল্যাণপুরে যে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলে, সেখান থেকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার রাকিবুল হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদে তামিমের বিষয়ে তথ্য মেলে বলে জানান গোয়েন্দারা।

তামিমকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা সংবাদ সম্মেলনে দেন আইজিপি শহীদুল হক।

একইসঙ্গে সেনাবাহিনীতে কয়েক বছর আগে অভ্যুত্থানচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে বরখাস্ত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হকের তথ্যের জন্যও ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের ছদ্মবেশ এই রকম হতে পারে বলে পুলিশের ধারণা

আইজিপি বলেন, “গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরের তিনটি ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড হিসাবে তামিম চৌধুরী ও বহিষ্কৃত মেজর জিয়াকে চিহ্নিত করেছি আমরা।”

জিয়ার বিষয়ে মনিরুল বলেন, “তার নাম আসে জঙ্গি হামলার ঘটনায় বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের আদালতে দেওয়া জবানবন্দি থেকে।”

জিয়া কোথায় আছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জিয়াও বাংলাদেশে আছে।”

জঙ্গি সংগঠনে জিয়া সাগর ও ইশতিয়াক ছদ্মনামে পরিচিত বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল।

২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনী এক সংবাদ সম্মেলনে সরকার উৎখাতে ধর্মান্ধ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার একটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনা নস্যাৎ করার খবর দেয়। তখনই প্রবাসী ব্যবসায়ী ইশরাক আহমেদ ও মেজর সৈয়দ জিয়ার নাম আসে, যারা ওই অভ্যুত্থান চেষ্টার মূল পরিকল্পনাকারী বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়।

গত দুই বছরে বাংলাদেশে একের পর এক ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক-প্রকাশক, বিদেশি নাগরিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু হত্যার প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি আবারও জিয়ার নাম আলোচনায় আসে।

জিয়া হয়ত জঙ্গিদের উপদল আনসার আল ইসলামের সঙ্গে রয়েছেন বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।

এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওসামা বিন লাদেন মারা যাওয়ার পর আল কায়দা যেমন দুর্বল হয়ে যায়। ঠিক তেমনি তামিম ও জিয়াকে গ্রেপ্তার করতে পারলে জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড দুর্বল বলে যাবে।”