হামলাকারী কয়জন ছিলেন, হামলার পিছনে কোন গোষ্ঠী এবং এ ঘটনায় আটক কয়জন ও তারা কারা- তা নিয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার হলি আর্টিজান বেকারিতে ছয় বন্দুকধারী হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মিকে হত্যা করে। শনিবার সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জিম্মি সঙ্কটের অবসানের পর দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, সন্দেহভাজন ছয় হামলাকারী নিহত হয়েছেন, একজন ধরা পড়েছেন।
পরে অবশ্য নিহত এই ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে হামলাকারী হিসেবে শনাক্ত করা হয়। যদিও এদের মধ্যে পরিচয় জানানো হয়েছে কেবল দুইজনের। বাকী ৩ জনের পরিচয় পুলিশ বা সরকারের পক্ষ থেকে এখনো জানানো হয়নি।
পরিচয় জানানো দুইজন হচ্ছেন- শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল এবং মো. খায়েরুজ্জামান। এর মধ্যে উজ্জ্বলের বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার কৈয়াগাড়ী গ্রামে। অপরজনের বাড়ি একই জেলার শাহজাহানপুর উপজেলায়।
ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সোমবার রাজারবাগে এক সভায় বলেন, আটকদের একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এর মধ্যেই জানা যায়, জাকির হোসেন শাওন (২২) নামে একজন হাতকড়া পরা অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, যাকে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টার মাথায় ওই এলাকা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় পুলিশ আটক করেছিল।
হলি আর্টিজানে বাবুর্চির সহকারী হিসেবে কাজ করে আসা এই তরুণকে সোমবার পরিবার শনাক্ত করে পুলিশের বিরুদ্ধে তাকে নির্যাতনের অভিযোগ করে।
এদিকে শনিবার সকালে উদ্ধার ১৩ জনসহ ২৭ জনকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছিল। পরে তাদের বক্তব্য শুনে যাচাই-বাছাই করে অনেককে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সোমবার গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এই ১৩ জনের মধ্যে দুই জন পুলিশ হেফাজতে আছেন। তাদের একজন তাহমিদ (২২); আরেকজন হাসানাত কারিম।
ব্যবসায়ী শাহরিয়ারের ছেলে তাহমিদ পুলিশকে বলেছেন, কানাডা থেকে দেশে ফিরে শুক্রবার ইফতারের পর বন্ধুদের সঙ্গে হলি আর্টিজান বেকারিতে গিয়েছিলেন। হাসানাত করিম বলেছেন, তিনি পরিবার নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন মেয়ের জন্মদিন উদযাপন করতে।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কারণে হাসানাতকে অব্যাহতি দিয়েছিল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক কোরীয় নাগরিকের ধারণ করা ভিডিও দেখিয়ে অনেকেই ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করছেন।
তবে ধরা পড়া জঙ্গি হিসাবে আইএসপিআরের একজন এবং পুলিশের বলা দুইজন কারা- সে বিষয়ে সেটা বুধবার পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে হামলাকারী জঙ্গিদের ছবি নিয়েও ধুম্রজাল চলেছে। অভিযান শেষে আইএসপিআর ছয়জন হামলাকারী মারা গেছে উল্লেখ করলেও রাতে পুলিশ পাঁচটি লাশের ছবি সাংবাদিকদের পাঠায়। হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে দেওয়া আইএসের নামে বার্তায় যে পাঁচজনের ছবি আসে ইন্টারনেটে, তার সঙ্গে পুলিশের সরবরাহ করা একটি ছবি মেলেনি।
পরে পুলিশের তালিকার একটি ছবিকে সাইফুল ইসলাম চৌকিদার হিসাবে চিহ্নিত করে তার পরিবার, যিনি হলি আর্টিজানে পাচক হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
এর মধ্যে সাইটের পাঁচজনের মধ্যে যে ছবিটি পুলিশের দেওয়া ছবির মধ্যে স্থান পায়নি, তাকে রোহান ইবনে ইমতিয়াজ নামে শনাক্ত করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক নেতা। এই রোহানের বাবাও ক্ষমতাসীন দলটির নেতা।
নিহতদের মধ্যে ছয়টি লাশ সন্ত্রাসীদের বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হয়েছে উল্লেখ করে বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পরে এদের পাঁচজন জঙ্গি বলে তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তবে ষষ্ঠ ব্যক্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য দেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
রোববার পুলিশ প্রধান একেএম শহীদুল হক গুলশানে হামলকারীদের জেএমবি হিসাবে উল্লেখ করলেও এর আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতা একেবারে উড়িয়ে দেননি।
তিনি বলেন, “অভিযানে নিহতরা, আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করছি, তারা জেএমবির সদস্য এবং জেএমবির সদস্য হিসেবেই আমরা তাদের খুঁজছিলাম।”
ঢাকায় রমজানে হামলার হুমকি এবং হামলাকারীদের ছবি প্রকাশের পরও তাদের আইএস সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পুলিশ প্রধান বলেন, “এটাই এখন আমরা জানি, তদন্ত শেষে আমরা চূড়ান্ত মত দিতে পারব। এখন পর্যন্ত তারা আমাদের কাছে জেএমবির সদস্য।”
এদিকে এ ঘটনায় সোমবার পুলিশের পক্ষ থেকে গুলশান থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা করা হয়েছে বলে বলা হলেও মঙ্গলবারও তার অনুলিপি আদালতে পৌঁছায়নি।
নিয়ম অনুযায়ী মামলার অনুলিপি আদালতে পাঠাতে হয়। গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দুপুরে মামলার অনুলিপি আদালতে পাঠাবেন বলে জানালেও পরে তা দেওয়া হয়নি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলার এজাহার চূড়ান্ত হয়নি বলে নাম প্রকাশে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।