নৈতিক স্খলনের প্রমাণ পাওয়ার কারণ দেখিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
Published : 18 Apr 2016, 08:46 PM
মীর মোশারেফ হোসেন (রাজীব মীর), বর্ণনা ভৌমিক ও প্রিয়াঙ্কা স্বর্ণকারকে স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকার আদেশ হয়েছে।
কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ পেয়ে তদন্তে সত্যতা মেলার পর বিশ্ববিদ্যালয় এই পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন হেলেনা ফেরদৌসী বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত চলছে।
অন্যদিকে ওই তিন শিক্ষকের দাবি, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না রেখেই তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
“বর্তমান চেয়ারপারসন ও তার সহযোগীদের এটি একটি ষড়যন্ত্র,” বলেছেন রাজীব মীর।
তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে ছাত্রীদের অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়া, শিক্ষকদের রোষানলের শিকার হওয়ার হুমকি প্রদান, নম্বর কম দেওয়াসহ নানা অভিযোগ জমা হয়।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক মো. সেলিম ভূঁইয়াকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত মঙ্গলবার রাজীব মীরসহ তিন শিক্ষককে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত মাস্টার্সের সমস্ত কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সুপারিশ করেন বলে বিভাগীয় প্রধান হেলেনা জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক শিক্ষার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিভাগের তিনজন শিক্ষককে মাস্টার্সের ক্লাস থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
“তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মেলায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টির আরও তদন্ত হচ্ছে।”
এই বিষয়ে রাজীব মীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জামায়াত-বিএনপি সমর্থকদের ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’ তারা তিনজন।
তিনি বলেন, “গত ১১ এপ্রিল ডিপার্টমেন্টের প্ল্যানিং কমিটির সভা ছিল। সেখানে অধাপক নিয়োগের জন্য আবেদনপত্র বাছাইয়ের কথা ছিল। সে বাছাইয়ে আমি দ্বিমত পোষণ করেছিলাম। সেজন্য চেয়ারপারসন আমার প্রতি রুষ্ট ছিলেন। আবার একাডেমিক কমিটির সভায় আমি নবীনবরণ অনুষ্ঠান নিয়ে তাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। সেটা নিয়েও তিনি আমাদের তিনজনের ওপর রুষ্ট ছিলেন।
ওই সভা চলার মধ্যেই ‘ভিসির আদেশক্রমে’ রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত চিঠি আসে বলে জানান তিনি।
রাজীব বলেন, পরদিন তিনিসহ তিন শিক্ষক উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এবং তদন্ত কমিটি হওয়ার বিষয়টি অবগত না হওয়ার বিষয়টি জানান।
“এরপরও আমাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এসেছে, আমাদের তো সেলফ ডিফেন্সের জায়গা থাকতে হবে। সেটা হয়নি, এটা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের পরিপন্থি। এজন্য আমরা আমরা ৭ দিনের মধ্যে আদেশ বাতিলের দাবি জানিয়েছি।”
ছাত্রীদের অনৈতিক প্রস্তাবের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “যেহেতু তারা আইনগতভাবে একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে, সেহেতু এখন গোঁজামিল দেওয়ার জন্য তারা নারী সংক্রান্ত বিষয়গুলো যোগ করেছে।
“যদি নারীঘটিত অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে থাকত, তাহলে পুরো বিভাগের কর্মকাণ্ড থেকেই অব্যাহতি দিত। শুধু মাস্টার্সের ক্লাস থেকে কেন দেবে? নারীঘটিত বিষয় হলে বর্ণনা, প্রিয়াঙ্কা ম্যাডামকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হল?”
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ণনা ও প্রিয়াঙ্কার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শিক্ষার্থীদের নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগ আসে।
তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগের সপক্ষে রেকর্ড আছে- জানানো হলে রাজীব বলেন, “উনি (চেয়ারপারসন) বলছেন রেকর্ড আছে, রেকর্ড থাকতে পারে এইটা যে, আমি শিক্ষার্থীদের বলেছি, তোমরা নবীনবরণে যেও না। বর্ণনা, প্রিয়াঙ্কা ম্যাডামও যাবেন না। চেয়ারম্যানকে আমি দেখে নেব। এইটুকু হতে পারে।”
চেয়ারপারসন হেলেনা বিভাগে ‘একনায়কতন্ত্র’ চালাচ্ছেন দাবি করে তিনি বলেন, “চেয়ারপারসন ও তার সহযোগীরা জামায়াতপন্থি, এটা তাদের একটা ষড়যন্ত্র।”
তবে প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়ার পর মঙ্গলবার অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হতে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান রাজীব।
এই বিষয়ে বর্ণনা ভৌমিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার কাছে একটি চিঠি এসেছে, যেখানে আমার বিরুদ্ধে একজন শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে মাস্টার্সের ক্লাস থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কী কারণে, কে অভিযোগ করেছে; সেটা ছেলে, না মেয়ে; আমি কিছুই জানি না।”
ওই চিঠি পাওয়ার পর প্রশাসনকে একটি চিঠি লিখলেও তার জবাব পাননি বলে জানান তিনি। এর মধ্যেই মঙ্গলবার তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হতে চিঠি এসেছে বলে জানান তিনি।
প্রিয়াঙ্কা স্বর্ণকারও বলেন, “আমি বুঝতে পারছি না, কী অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে।”