বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটেও থাকতে চায় ভারত

জল ও স্থলে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতার যে সূচনা হয়েছে তাকে মহাকাশে নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2016, 07:17 AM
Updated : 23 March 2016, 01:05 PM

তিনি বলেছেন, “আমরা দুই দেশ মিলে বিশ্বের সামনে একটি উদাহরণ তৈরি করছি- প্রতিবেশীর সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক রাখতে হয়; আন্তঃনির্ভরশীল পৃথিবী বাস্তবায়নের পথ কোনটা হতে পারে।”

বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোদী এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপালের মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের জন্য বিবিআইএন চুক্তির কথা উল্লেখ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিছুদিন আগে আমরা একযোগে রোড কানেক্টিভিটির কাজ শুরু করেছি। আজ আমরা বিদ্যুতের মাধ্যমে নতুন শক্তি তৈরি করছি। একবিংশ শতাব্দীর যে প্রয়োজন, সেই ডিজিটাল কানেক্টিভিটিও একযোগে করছি।

“তার মানে জল-স্থল-নভঃ সব জায়গায় বাংলাদেশ-ভারত একসঙ্গে চলছে আর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।”

মোদী বলেন, “আমি আগেও বলেছি, মহাকাশেও আমাদের একসঙ্গে চলা উচিৎ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট.. ভারতের একান্ত ইচ্ছা, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে এক সঙ্গে চলতে চায়।”    

মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে ২০১২ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্প নেয় সরকার। এরপর ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় এ প্রকল্পে।

‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণের জন্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনা হচ্ছে ফ্রান্স থেকে। আর বাংলাদেশকে ‘অরবিটাল স্লট’ ইজারা দিচ্ছে রাশিয়া।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে বলে সরকার আশা করছে।

ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্যের শুরুতে মোদী ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলেন, “প্রথমে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা... একটু দেরি করে জানাচ্ছি। আগামী ২৬ তারিখে আপনাদের জাতীয় দিবস। ভারতের জনগণের তরফ থেকে জানাই অভিনন্দন।”

সকালে ঢাকার গণভবন এবং দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই ভিডিও কনফারেন্সে বিকালে ব্যাঙ্গালুরুতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের প্রসঙ্গও আসে।

মোদী বলেন, “আজ ভারতের হোলি উৎসব। ভারতে হোলি খুবই পবিত্র উৎসব। বাংলাদেশেও কিছু জায়গায় এই উৎসব পালন করা হয়। আজ আরেকটি মহত্বপূর্ণ দিন। তা হলো বাংলাদেশ-ভারতের টি- টোয়োন্টি ক্রিকেট ম্যাচ। আমি দুটি টিমকে অনেক শুভ কামনা জানাই।”

তিনি বলেন, “ভারত আর বাংলাদেশ যখন খেলে, তখন খেলার জয়-পরাজয় ছাপিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ খেলার শক্তি সৃষ্টি হয়। বিদ্যুৎ যেমন শক্তি দেয়, তেমন আমাদের দুটি টিম আজ বন্ধু্ত্বপূর্ণ  ‘স্পোর্টসশিপের’ জায়গা থেকে খেলবে, আমার এই শুভ কামনা।”

বিদ্যুৎ ও বান্ডউইথ বিনিময়ের এই ঘটনাকে মোদী অভিহিত করেন এক ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে।

“দুনিয়ায় এমন মুহূর্ত কমই আসে যখন দুটি দেশের প্রধানমন্ত্রী ও একজন মুখ্যমন্ত্রী মিলে আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্যে কোনো কিছুর উদ্বোধন করলেন। এ দিক থেকে এটি খুবই মহত্বপূর্ণ দিন।”

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানজির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অটুট ছিলো।... আজও আমরা আপনার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে চলছি। আমরা দুই দেশ মিলে বিশ্বের সামনে একটি উদাহরণ তৈরি করছি।”

বাংলাদেশ থেকে ভারতে ব্যান্ডউইথ যাওয়া প্রসঙ্গে মোদী বলেন, “আমাদের জন্য একটি গেটওয়ে খুলছে। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে প্রবেশের আমাদের দুটি গেটওয়ে একটি পশ্চিমে আরকটি দক্ষিণে। আমাদের পুর্বে কিছু ছিল না। পুর্বের গেটওয়ে আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সাথে মিলে পূর্বে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করছি।”

ভারতের পূর্বাঞ্চলের তরুণদের জন্য এ দিনটিকে ‘নতুন চেতনা জাগানোর দিন’ অভিহিত করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

“আজকের দুনিয়া কমিউনিকেশনের শক্তিতে চলে। আজকের দিন সেই শক্তি বাড়ানোর দিন। এজন্য আপনি যে সহযোগিতা করেছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।”

মোদী বলেন, বিদ্যুতের যে সঞ্চালন লাইন ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে, তার ক্ষমতা বেশি রাখা হয়েছে ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আরও বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা মাথায় রেখে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়া পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে তাকে হোলির শুভেচ্ছা জানান।