বিএনপির শাসনামলে নিয়োগ পাওয়া নির্বাচন কর্মকর্তার অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করেছে বলে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ।
Published : 10 Mar 2016, 07:57 PM
বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে দেখা করে এ অভিযোগ করা হয় বলে জানান আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের প্রধান দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ।
তিনি বলেন, “প্রকৃত ঘটনা অন্যভাবে ঘুরিয়ে যে নির্বাচন কর্মকর্তা সেই অভিযোগ করেছেন, তিনি ২০০৫ সালে নিয়োগকৃত, যিনি সম্পূর্ণভাবে একটি রাজনৈতিক দলের আদর্শে আদর্শিত কর্মী, তার সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরাখাস্ত করেছে।”
হানিফ বলেন, “আমাদের অভিযোগ ছিল, ঘটনার সঠিক তদন্ত না করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু একজন ব্যক্তির কথার ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।
“এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে গিয়ে সরকারি দলের ওপর অতিমাত্রায় খড়গহস্ত হয়েছে।”
গত ১ মার্চ ফুলগাজী উপজেলার সব ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোট বন্ধ করে ইসি। এরপর ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিমকে অপসারণে স্থানীয় সরকার বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
হানিফ বলেন, ফুলগাজীর উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ, তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দিয়েছেন। ওই অভিযোগের কারণে নির্বাচন কমিশন থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগে তাকে অপসারণের চিঠি দেওয়া হয়। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
“আমরা ইসিকে বলেছি, ফুলগাজীতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। ওই জায়গায় দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব রয়েছে। বিএনপির সভাপতি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, সাধারণ সম্পাদক আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে অন্য দলের লোকদের মনোনয়ন দিয়েছেন।
“এটা নিয়ে বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। এর বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।”
দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া নির্বাচন কর্মকর্তারাই ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
বিএনপির শাসনামলে ২০০৫ সালে বিচারপতি এম এ আজিজ নেতৃত্বাধীন কমিশন সময় ৩২৭ জন নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছিল। তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ তখনই দলীয় বিবেচনায় এই নিয়োগের অভিযোগ তুলেছিল।
এর পরিপ্রেক্ষিতে এটিএম শাসুল হুদার কমিশন পুনরায় তাদের পরীক্ষা নিয়ে অধিকাংশ কর্মকর্তাকে পুনর্বহাল করে। বাছাই পরীক্ষায় ৮৫ কর্মকর্তা বাদ পড়লেও মামলা করে চাকরি ফিরে পান তারা।
প্রতিনিধি দলে থাকা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিএনপি-জামায়াতের অনুসারী অন্তত ৮৫ কর্মকর্তা এখনও ভোটের দায়িত্বে রয়েছেন। এ বিষয়টিও ইসির নজরে আনা হয়েছে।”
‘নিরপেক্ষতার দোহাইয়ে আ. লীগের ওপর খড়্গহস্ত’
হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমবারের মতো ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে এ নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ, সাড়া ও উদ্দীপনা রয়েছে।
“একসময়ে যারা নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা করেছে, তারাও এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তাদের কিছু নেতিবাচক কর্মকাণ্ড রয়েছে। ইসির কাছে আমাদের সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ এবং অভিযোগ তুলে ধরেছি।”
নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে ইসিকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাসও দেন তিনি।
হানিফ বলেন, “ইসি আইন প্রয়োগ করতে পারেন। পাশাপাশি নিরপেক্ষ থাকার দোহাই দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ওপর আইনের খড়গ চাপালে তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
“আমরা সেই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। আমরা আশা করি, ইসি আমাদের অভিযোগগুলো বিবেচনা করবেন, যাতে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়।”
প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাছিম, আবদুর রাজ্জাক ও দীপু মনি।