অভিজিৎদের ভুলে থাকার মেলা

অমর একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে খুন হয়েছিলেন বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়; কিন্তু তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে কোনো কর্মসূচি নেই লেখক-পাঠকের এই মিলনমেলায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2016, 05:22 PM
Updated : 25 Feb 2016, 05:45 PM

শুধু লেখালেখির কারণে প্রাণ হারানো একজন লেখকের এমন ‘বিস্মৃতিতে’ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার স্বজনরা।

অভিজিতের বাবা অজয় রায় বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বইমেলায় নিহত লেখক-প্রকাশকদের জন্য কিছু না থাকা প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তখন তিনি এড়িয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন, প্রকাশকরা চাইলে কিছু করতে পারে।

“ওরাতো আসলে চাকরি করে। কোনো কিছু করলে সরকার বিব্রত হবে, তাই এমন কিছু করতে চায় না।”

প্রকাশকরাও কোনো কর্মসূচি নেয়নি-এ তথ্য জানালে তিনি বলেন, “আসলে সবাই ব্যাপারটিকে এড়িয়ে যেতে চাইছেন। দোষগুলি নিজের গায়ে আসবে ভেবে।”

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী অভিজিৎ রায় ছিলেন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা। গত বছর বইমেলা চলাকালে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে দেশে ফিরে ২৬ ফেব্রুয়ারি খুন হন তিনি।

অভিজিৎ রায়

বইমেলা থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন অভিজিৎ। তার স্ত্রী বন্যাও সন্ত্রাসীর চাপাতির আঘাতে আঙুল হারান।

এর আট মাসের মাথায় একই বছরের ৩১ অক্টোবর অভিজিতের বই প্রকাশকারী জাগৃতি ও শুদ্ধস্বর প্রকাশনীতে হামলা হয়।

লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর কার্যালয়ের হামলায় অভিজিতের বইয়ের প্রকাশক শুদ্ধস্বরের কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল, ব্লগার তারেক রহিম ও রণদীপম বসু গুরুতর আহত হন।

একই কায়দার হামলায় শাহবাগে নিজ কার্যালয়ে নিহত হন জাগৃতির কর্ণধার দীপন। অভিজিতের জনপ্রিয় বই ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ ছেপেছিলেন তিনি।

দীপন খুন হওয়ার তিন মাসের মাথায় এলো এবারের বইমেলা।

অভিজিতের বাবা অজয় রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন, বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির জন্য তিনিও খ্যাতিমান। অন্যদিকে দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ফজলুল হকও একজন লেখক।

বৃহস্পতিবার মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে শুদ্ধস্বরের স্টলে অভিজিৎ রায়ের ছবি সম্বলিত দুটি ব্যানার টাঙানো দেখা গেছে। শ্রাবণ প্রকাশনীর স্টলে অভিজিতের সঙ্গে জাগৃতির প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন স্মরণেও ছবি রয়েছে।

অভিজিৎ রায়ের পাঁচটি বইয়ের মধ্যে ‘সমকামিতা’, ‘ভালোবাসা কারে কয়’, ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ ও ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ মেলায় এনেছে শুদ্ধস্বর; আর ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ এসেছে জাগৃতির স্টলে।

অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে কোনো কর্মসূচি না থাকার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি বলেন, “আমাদের আলাদা কোনো কর্মসূচি নেই। তবে শুক্রবার বিকাল ৪টায় আমাদের যে সংবাদ সম্মেলন আছে তাতে কিছু বক্তব্য থাকবে।”

প্রকাশকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই মেলার সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে সংগঠনটি। আগের দিন বৃষ্টিতে মেলায় বিঘ্ন ঘটার প্রেক্ষাপটে ওই সিদ্ধান্ত নেয় বাংলা একাডেমি।

অভিজিৎ হত্যার বিচার দাবিতে কর্মসূচি

অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে শুক্রবার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে গণজাগরণ মঞ্চ।

গত বছর এই দিনে বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনের যে জায়গায় অভিজিৎ হামলার শিকার হয়েছিলেন সেখানে তার প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়া হবে।

এরপর আলোচনা সভা, মোমবাতি প্রজ্বলন ও আলোর মিছিল করবেন গণজাগরণ কর্মীরা। 

মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এসব কর্মসূচির কথা জানান।

তিনি বলেন, “এই এক বছরে বারংবার মৌলবাদের কালো থাবায় বিপর্যস্ত হয়েছে মুক্তচিন্তা, বাকস্বাধীনতা, আহত হয়েছে বাংলাদেশ। অভিজিৎ রায়কে খুনের মধ্য দিয়ে যে মর্মঘাতী মৃত্যুর প্লাবন শুরু হয়েছিল তা বিস্তৃত হয়েছে ব্লগার ওয়াশিকুর বাবু, ব্লগার ও বিজ্ঞানলেখক অনন্ত বিজয় দাশ, ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নীল এবং সর্বশেষ জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে খুনের ধারাবাহিকতায়।”

অভিজিৎ হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করে তিনি বলেন, “যদি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হয়, তবে এই মৃত্যুর মিছিল থামানো যাবে না।

“তাই এই নৃশংস খুনের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার জন্য সকল ব্যক্তি ও সংগঠনকে উদাত্ত আহ্বান জানাই।”