একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন বিভাগের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতও।
Published : 23 Feb 2016, 09:52 PM
যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর আপিলের উপর ষষ্ঠ দিনের শুনানিতে মঙ্গলবার আদালতের অসন্তোষের প্রকাশ ঘটে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
আপিল বিভাগে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। বুধবার তা শেষ করার আশা করছেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা নিয়ে এর আগেও আদালতের অসন্তোষের প্রকাশ ঘটেছিল। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার ক্ষেত্রে তদন্তের গাফিলতি এবং প্রসিকিউটরদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেলও।
মঙ্গলবার শুনানির পর তিনি বলেন, “মীর কাসেম আলীর মামলা এবং অন্যান্য মামলা পরিচালনারও ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের যে ইনভেস্টিগেটর (তদন্তকারী) ও প্রসিকিউটর (মামলা পরিচালনাকারী) সংস্থা আছে, তাদের কাজের ওপর আদালত গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
“এই মর্মে একটা উক্তি করেছেন, যথেষ্ট খরচ হচ্ছে এদের পিছনে, কিন্তু সে রকমভাবে, সঠিকভাবে তদন্ত ও মামলা পরিচালনা করছেন না বলে তাদের কাছে মনে হয়েছে। এই মামলার তদন্ত কাজ আরও সুষ্ঠুভাবে করা যেত এবং আরও ভালোভাবে মামলাটি পরিচালনা করা যেত বলে আদালত অভিমত ব্যক্ত করেছে।”
সাঈদীর মামলায় আপিলের শুনানিতেও সর্বোচ্চ আদালতের সে রকম প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল বলে জানান মাহবুবে আলম।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সরকার নিযুক্ত প্রসিকিউটররাই মামলা পরিচালনা করেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আপিলটি হয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। সেখানে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল প্রসিকিউশনের পক্ষে যোগ দেন।
জামায়াতের অর্থ জোগানদাতা হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ী মীর কাসেমকে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে তার আপিলের শুনানি চলছে এখন।
তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউটরদের কাজের প্রভাব আপিলের রায়ে পড়বে বলে মনে করেন কি না- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে মাহবুবে আলম বলেন, “আমার মনে হয় না।
“কারণ অনেকগুলো চার্জ আছে। এ ব্যাপারে আদালত দেখবে, কোন কোন চার্জে রাষ্ট্রপক্ষ বা প্রসিকিউশন পক্ষ সার্থকভাবে মামলাটি পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে। সবগুলো চার্জের ব্যাপারেই কোনো সারবত্তা নেই বলে একথা বলা যাবে না।”
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে এই আপিলের শুনানি চলছে। বেঞ্চের অন্য চার সদস্য হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
এটি আপিল আদালতে আসা যুদ্ধাপরাধের সপ্তম মামলা, যার শুনানি শুরু হয় গত ৯ ফেব্রুয়ারি।
শুনানির বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, একাত্তরে আল বদর নেতা মীর কাসেম আলী যে চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলের ‘টর্চার ক্যাম্প’র প্রধান ছিলেন, সেটাই মূল যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি।
“সেখানে যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তারাই আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন এবং তাদেরকে যেসব সাজেশন দেওয়া হয়েছে, সেই সাজেশনে বরঞ্চ আসামিপক্ষ অনেকগুলো জিনিস স্বীকার করে নিয়েছে। আর তিনজন লোক যে মারা গেছেন, মুক্তিযোদ্ধা জসীম, টিন্টো সেন ও রঞ্জিত দাস; এই মৃত্যুগুলোকে তারা অস্বীকার করেননি।”
“আমাদের চূড়ান্ত সাবমিশনের সময় আমরা দেখাব যে মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে, নির্দেশে ও তার উপস্থিতিতে এই হত্যাকাণ্ডগুলো হয়েছে,” বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৪টি অভিযোগের মধ্যে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদসহ আটজনকে হত্যায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাসেমের ফাঁসির রায় আসে।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন তিনি। দেড়শ পৃষ্ঠার মূল আবেদন ও এক হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠার নথিপত্রসহ করা আপিলে মীর কাসেম সাজা বাতিল চেয়ে খালাস চেয়েছেন।