এটিএম বুথে জালিয়াতির ঘটনায় সিসি ক্যামেরায় পাওয়া ছবি দেখে গ্রেপ্তার বিদেশি নাগরিক পিওতর সেজেফান মাজুরেকের সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সখ্যের ‘তথ্য এসেছে’ পুলিশের হাতে।
Published : 22 Feb 2016, 05:35 PM
এই বিদেশিসহ তিন ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার তাদের সাংবাদিকদের সামনে এনে একথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
কাদের সঙ্গে সখ্য এবং কী বিষয়ে তাদের সম্পর্ক সে বিষয়ে মুখ খোলেননি এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
“গ্রেপ্তারকৃত বিদেশির সঙ্গে বেশ কিছু ব্যবসায়ীদের সখ্য আছে বলে জানতে পেরেছি। তবে এই সখ্যতা তার মানব বিদেশে পাঠানো নিয়ে, না এটিএম কার্ড জালিয়াতির বিষয়ে, তা তদন্ত শেষে জানা যাবে।”
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের পর বিদেশি পিওতর (টমাস পিটার) এবং সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা মোকসেদ আলী মাকসুদ, রেজাউল করিম শাহীন, রেফাত আহমেদ রনিকে আদালতে পাঠানো হয়।
তথ্য প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় পুলিশের আবেদনে সায় দিয়ে বিচারক চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকায় তিনটি ব্যাংকের ছয়টি এটিএম বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ বসিয়ে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির পর কার্ড ক্লোন করে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটলে তা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ও সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মামলা করলে তার তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ইউসিবি মামলার এজাহারের সঙ্গে এটিএম বুথের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা এক বিদেশির ছবিও যুক্ত করে দিয়েছিল, ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করে পিওতরকে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ঢাকায় বিয়ে করে সংসার
গোয়েন্দা পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, ইউক্রেইনে জন্মগ্রহণকারী পিওতর পোল্যান্ডের ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে বিয়ে করে সংসার পেতেছিলেন। তার কাছে জার্মানির একটি পরিচয়পত্রও পাওয়া গেছে।
ডিবির এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর পিটার ব্যবসায়িক কাজের কথা বলে বাংলাদেশ আসেন।
“প্রথম কয় মাস সে গুলশানের ‘হলি ডে প্লানেটে’ ছিল। পরে এক নারীকে বিয়ে করে গুলশানের এক বাসা ভাড়া নেয়। তার এক সন্তানও হয়েছে।”
গুলশানের ওই ভাড়া বাসা থেকে রোববার সন্ধ্যায় পিওতরকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল জানান।
তবে আদালতে নেওয়ার পর এই বিদেশির আইনজীবী দাবি করেন, তাকে এক সপ্তাহ আগে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু তা প্রকাশও করেনি, আদালতেও নেয়নি।
ইউসিবির সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া ছবি দেখে পাঁচ বিদেশির উপর নজর রাখার কথা গত সপ্তাহে জানিয়েছিল পুলিশ। গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল তখন বলেছিলেন, আসল অপরাধীর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরই গ্রেপ্তার করা হবে।
পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এই সাইবার অপরাধে কোনো বিদেশিকে গ্রেপ্তার এটাই প্রথম।
এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পিওতর রুমানিয়া, রাশিয়া ও বুলগেরিয়ায়ও এই ধরনের অপরাধ করে এসেছেন। সেসব দেশে যাওয়ামাত্র তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।
‘ব্যাংকের লোক ছাড়া সম্ভব নয়’
পুলিশ জানিয়েছে, পিওতরের দেওয়া তথ্যে প্রথমে ব্যাংক কর্মকর্তা মাকসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাকসুদের দেওয়ার তথ্যে গ্রেপ্তার করা হয় তার দুই সহকর্মীকে।
বেসরকারি ব্যাংকটির এই তিন কর্মকর্তা মার্চেন্ট অ্যাকোয়ার্ড জোনের পয়েন্ট অফ সেল (পস) লেনদেন সংক্রান্ত কাজের দায়িত্বে রয়েছেন বলে তাদের সহকর্মীরা জানান।
অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল সাংবাদিকদের বলেন, “ব্যাংকের লোক জড়িত থাকা ছাড়া এই কাজ করা সম্ভব নয়।”
সিটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল আর কে হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন।
“যেই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকুক, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
পিওতর এই জালিয়াতিতে আরও একজন বিদেশি ও একজন বাংলাদেশির নাম বলেছেন জানিয়ে ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, “তারা ইতোমধ্যে বিদেশ চলে গেছেন।”
পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার পিওতর একটি আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের সদস্য। বুলগেরিয়া এবং ইউক্রেইনের এক নাগরিককে নিয়ে এই জালিয়াতির পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন তিনি।
মনিরুল বলেন, “এই চক্র আগেও অনেক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। তবে তখন তারা আন্তর্জাতিক কার্ডে জালিয়াতি করত। এই প্রথম স্থানীয় কার্ড জালিয়াতির করতে গিয়ে ধরা পড়ল।”
হেফাজতে নিয়ে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য এবং চক্রের অন্য সদস্যদের নাম জানা যাবে বলে আশা করছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
ইউসিবি, ইস্টার্ন ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের ছয়টি বুথে জালিয়াত চক্র ‘স্কিমিং ডিভাইস’ বসিয়ে তথ্য চুরি করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ওই যন্ত্র বসানো অবস্থায় বুথগুলোতে ১২০০ কার্ডের লেনদেন হয়েছে। আর এ পর্যন্ত ৪০টি কার্ড ক্লোন করে গ্রাহকের প্রায় ২০ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার তথ্য গোয়েন্দারা পেয়েছেন বলে তথ্য এসেছে গণমাধ্যমে।