রাজধানীর কূটনীতিক পাড়া গুলশান থেকে আটকের পর পাকিস্তান হাই কমিশনের এক কর্মীকে কর্মকর্তাদের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
Published : 01 Feb 2016, 07:40 PM
তার কাছে অবৈধভাবে রাখা ভারতীয় রুপি পাওয়া গিয়েছিল বলে পুলিশ দাবি করলেও তা প্রত্যাখ্যান করে পাকিস্তান হাই কমিশন এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।
হাই কমিশন অভিযোগ করেছে, আবরার আহমেদ খান নামে ওই কর্মকর্তাকে ধরে তার কাছে ৫ কোটি টাকা চেয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ। তা না দিলে ‘ক্রসফায়ারের’ ভয়ও দেখানো হয়েছিল।
তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা পাকিস্তান দূতাবাসের ওই কর্মকর্তাকে ভয় দেখানোর কিংবা হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ঢাকায় পাকিস্তানের হাই কমিশন কর্মকর্তাদের জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ নিয়ে দুই দেশের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যে সোমবার দূতাবাসকর্মীকে আটকের ঘটনা ঘটল।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. মারুফ হোসেন সরদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় ওই ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছিল। পরে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।
আবরার খান ১০ বছর ধরে ঢাকায় প্রেস সেকশনে অ্যাসিটেন্ট প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করছেন বলে পাকিস্তান হাই কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। তার বাসাও গুলশান ২ নম্বর সেকশনে।
যে দলটি পাকিস্তান দূতাবাসকর্মীকে আটক করেছে, তার নেতৃত্বে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গুলশান এক এবং দুই নম্বরের মাঝমাঝি আগোরার সামনে মোটর সাইকেলে থাকা অবস্থায় তাকে আটক করা হয়।
“তার কাছে মোটর সাইকেলের কোনো কাগজ বা চালকের লাইসেন্স পাওয়া যায়নি।”
উপ-কমিশনার মারুফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দেহ তল্লাশি করে ওই দূতাবাসকর্মীর কাছে সাড়ে তিন হাজার ভারতীয় রুপি পাওয়া যায়।
“জিজ্ঞাসাবাদে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর বিকালে দূতাবাস কর্মকর্তাদের ডেকে তাকে হস্তান্তর করা হয়,তবে তার সঙ্গে থাকা রুপি জব্দ করা হয়েছে।”
পুলিশ দুপুরে বললেও পাকিস্তান হাই কমিশন থেকে সন্ধ্যায় পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আবরারকে সকাল ১১টায় তুলে নেওয়া হয়েছিল।
“ডিবির জ্যাকেট পরা চার-পাঁচজন আবরার খানকে গুলশান ২ নম্বরে তার বাড়ির সামনে থেকে জোর করে রুপালি রঙের একটি গাড়িতে তোলে। এরপর জোর করে তার বাড়িতে ঢুকে তার মোটর সাইকেলটিও নিয়ে যায়।”
আবরারকে উদ্ধৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “তাকে গাড়িতে তুলে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে চোখ বেঁধে চার ঘণ্টা ঘোরানো হয়েছিল। তার কাছে পাঁচ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল, নইলে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছিল।”
এরপর গুলশান থানায় যোগাযোগ করা হলে দূতাবাস কর্মকর্তারা জানতে পারেন, তাদের সহকর্মী আবরার থানায় আছেন। পরে কর্মকর্তারা গিয়ে তাকে নিয়ে আসেন।
দূতাবাসকর্মীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তার সঙ্গে এই আচরণের নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান হাই কমিশন।
দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অপবাদ ও মিডিয়া ট্রায়ালের’ পর পাকিস্তান হাই কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এভাবে হেনস্তার এই ধরনটি দেখা যাচ্ছে।
আবরারকে হুমকি ও ভয় দেখানোর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ধরনের কাজের প্রশ্নই ওঠে না।”
তবে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, তারা পাকিস্তানি এই নাগরিককে দীর্ঘদিন ধরেই নজরদারির মধ্যে রেখেছিলেন।
পাকিস্তানের দূতাবাস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ করে আসছে পুলিশ।
জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত সন্দেহে গত বছরের জানুয়ারিতে পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মকর্তা মাযহার খানকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
জঙ্গি ‘যোগসাজশের’ অভিযোগ ওঠার পর ঢাকায় পাকিস্তান হাই কমিশনের কূটনীতিক ফারিনা আরশাদকে গত বছরের শেষ দিকে তার দেশে ফেরত পাঠানো হয়।