রাজধানীর রমনার বেইলি রোডের এক ভবনের পাঁচতলা থেকে একটি নবজাতক নিচে পড়ে আহত হয়েছে।
Published : 01 Feb 2016, 04:10 PM
শিশুটিকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে ওই বাড়ির গৃহকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তিনি নিজেকে ওই শিশুটির মা বলে দাবি করেছেন।
নবজাতকটিকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে আশঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এদিকে শিশুটিকে দত্তক নিতে চেয়েছেন নিঃসন্তান এক নারী।
সোমবার দুপুরে বহুতল ওই ভবনের পাশের একতলা ভবনের ছাদ থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় নবজাতকটিকে উদ্ধার করা হয় বলে রমনা থানার এসআই আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন।
ওই একতলা ভবনের ‘সায়মা ফ্যাশন’ নামে দোকানের কর্মচারী আব্দুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুপুর ১টার দিকে তাদের ছাদে ভারী কিছু পড়ার শব্দ হয়।
“সাথে সাথে ছাদে উঠে দেখি, একটি রক্তাক্ত নবজাতক কান্না করছে। তখন মালিককে ও পুলিশকে ফোন করি।”
শিশুটিকে স্থানীয়রাই মগবাজারের আদ-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশ এসে পাশের ভবনের পঞ্চম তলায় তল্লাশি করে ১৭ বছরের ওই গৃহকর্মীকে আটক করে।
দুপুরে ওই বাড়িতে পুলিশের তল্লাশির সময় দুজন গৃহকর্মী ছাড়া শুধু পক্ষাঘাতগ্রস্ত গৃহকর্তাই ছিলেন। গৃহকর্মীদের মধ্যে একজন ১৭ বছরের, অন্যজন আরও ছোট।
এসআই আমিনুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নবজাতকটি বড় গৃহকর্মীর। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সেই শিশুটিকে বেলকনি দিয়ে ফেলে দেয়।
ওই গৃহকর্মীকে আটক করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছে পুলিশ।
গৃহকর্ত্রী ফিরোজা হক (৬৫) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই গৃহকর্মী ১০ বছর ধরে তার বাসায় কাজ করেছেন। প্রেমঘটিত একটা সমস্যা তৈরি হলে তাকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর তার অভিভাবকদের অনুরোগে গত রমজানে ফিরিয়ে আনেন।
“দুপুরে বাজার থেকে ফিরে দেখি সে বসে ডিমসিদ্ধ খাচ্ছে। এরপর বাসায় পুলিশ ঢুকে তাকে নিয়ে যায়।”
ওই গৃহকর্মী হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানায়, ১০ মাস আগে তিনি কুমিল্লায় বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়ে ভগ্নিপতি কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছিলেন। তার ফলে তিনি গর্ভধারণ করেন এবং সোমবার তার শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়।
আদ-দ্বীন হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. আবু সাঈদ মোল্লা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাচ্চাটির বাম পায়ে ফ্রাক্চার আছে। তবে সে এখন আশঙ্কামুক্ত।”
হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. মঞ্জুরুল হক মিশুক বলেন, “শিশুটিকে যখন আনা হয়, তার নাড়িও কাটা ছিল না। বাচ্চার মা তার নিজের ডেলিভারি নিজে করেছেন বলে মনে হচ্ছে।”
ফাতেহা আক্তার জেবিন নামে নিঃসন্তান এক নারী ওই শিশুকে দত্তক নিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
জেবিনের স্বামী মাসিক আল ফোরকান পত্রিকার সম্পাদক এম আতিকুল হক। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক।
জেবিন হাসপাতালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চার বছর আগে বিয়ে হলেও আমার কোন সন্তান নেই। ওই শিশুটিকে ছুড়ে ফেলার পর খুব খারাপ লাগে। এরপর স্বামীকে বিষয়টি জানালে সে বাচ্চাটিকে দত্তক নেওয়ার অনুমতি দেন।”
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, দত্তক দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত তারা দিতে পারবে না। এই নিয়ে তাদের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
জেবিন বলেন, “বাচ্চাটির চিকিৎসার জন্য যাবতীয় খরচ আমরা বহন করতে চাই। শিশুটিকে পাওয়ার জন্য সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা আমি সম্পন্ন করব।”