ওষুধের মেধাস্বত্বে বাংলাদেশ আরও ১৭ বছর ছাড় পাওয়ায় দেশের মানুষ ক্যান্সার, আর্থ্রাটিস, অ্যাজমাসহ অনেক জটিল রোগের ওষুধও খুব কম মূল্যে পাবে বলে এ শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন।
Published : 08 Nov 2015, 11:59 PM
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ রোববার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে স্বল্পোন্নত দেশের জন্য ট্রেড রিলেটেড অ্যাসপেক্টস অব ইনটেলেকটুয়াল প্রপার্টি রাইটস (ট্রিপস) অনুসারে ওষুধ পণ্যের মেধাস্বত্বের বিধান বাস্তবায়নের সময়সীমা ২০৩৩ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্তর বাড়ানোর খবর জানান।
গত ৬ নভেম্বর জেনেভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা-ডব্লিউটিও’র সদরদপ্তরে ট্রিপস কাউন্সিলের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান তিনি।
এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি নাজমুল আহসান পাপন এবং ইনসেপটার ব্যবস্থাপনার পরিচালক আবুল মুকতাদির উপস্থিত ছিলেন।
মেধাস্বত্বে ছাড় পাওয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের জন্য যুগান্তকারী মন্তব্য করে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাপন বলেন, “কল্পনাও করতে পারিনি, এতদিনের জন্য বাড়ানো হবে। এটা কেবল কোম্পানিগুলোর জন্য নয়, মানুষের জন্য উপকার নিয়ে আসবে।”
এই ছাড় না পেলে ওষুধ শিল্পে কেমন প্রভাব পড়ত তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “এখন মানুষ ৪-৬ টাকায় যেটা খাচ্ছে, এই সুবিধা না পেলে জানুয়ারিতে ১১০-১২০ টাকায় সেই ওষুধ বিক্রি করতে হত।
“হেপাটাইসি-সির একটা ওষুধ বেক্সিমকো ও স্কয়ার করেছে, যার দাম ৭ ডলার। পৃথিবীর যে কোনো দেশে একটা ট্যাবলেটের দাম ১ হাজার ডলার। সেটা এই সুবিধা পাওয়ার কারণেই।”
পাপন বলেন, ১৯৯৫ সালে যখন ট্রিপস চুক্তি স্বাক্ষর হয়, তখন বলা হয়, অন্তত ২০ বছরের জন্য পণ্যের মেধাস্বত্ব দিতে হবে। তার মানে একটা ওষুধ আবিষ্কার হচ্ছে, তখন ২০ বছর আর কেউ ওই ওষুধ বানাতে পারবে না।
“সেজন্য এটা নিয়ে ব্যাপক হুলস্থূল হয়। তখন গরীব দেশগুলোকে ১০ বছর সময় দেওয়া হয়। এই ১০ বছর পর কেউই প্রযুক্তি ট্রান্সফারের মাধ্যমে সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি।
“সেখানে ৪৯টা দেশ ছিল, পরে ৫০ হল। আমাদের কপাল ভালো যে, আমরা সেই তালিকায় আছি এবং আমরা ছাড়া আর কেউ ওষুধ বানাতে পারে না। এটা আমাদের জন্য বিরাট সুবিধা।”
আগামী তিন বছরের মধ্যে তৈরি পোশাকের পর ওষুধ বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি পণ্য হবে বলে আশা করেন তিনি।
ইনসেপটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল মুকতাদির বলেন, “আপনারা ভবিষতে দেখতে পারবেন-ক্যান্সার, আর্থ্রাটিস, অ্যাজমা, ডায়াবেটিসসহ বহুবিধ জটিল রোগের ওষুধ যেগুলো বিদেশে লাখ লাখ টাকা, বাংলাদেশের জনগণ সেটা ভার্চুয়ালি কোনো পয়সা ছাড়াই পাবে-এই রকম একটা অবস্থা।
“এই নতুন নতুন ওষুধ কেবল বাংলাদেশ বানাতে পারবে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অন্যদের এই সক্ষমতা নেই।”
মেধাস্বত্বে ছাড়ের এই সময়ে বাংলাদেশের ৩০ থেকে ৪০টি ওষুধ কোম্পানি ‘গ্লোবাল ও মাল্টিন্যাশনাল’ কোম্পানিতে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।