দুই বিদেশি হত্যা ও শিয়া সমাবেশে হামলার পর আশুলিয়ায় তল্লাশি চৌকিতে পুলিশ হত্যার দায়ও মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।
Published : 05 Nov 2015, 08:32 PM
তবে বরাবরের মতই তাদের এ দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে আইএসের তৎপরতার কোনো তথ্য তারা পাননি।
কোনো গোষ্ঠী মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই ‘ভুয়া পরিচয়ে’ আইএস-এর নাম ব্যবহার করে দায় স্বীকার করছে বলে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামানের ধারণা।
গত বুধবার সকালে সাভারের আশুলিয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাড়ইপাড়া এলাকায় পুলিশের একটি তল্লাশি চৌকিতে হামলা হয়। মুকুল হোসেন নামের এক কনস্টেবলকে কুপিয়ে হত্যা করে এবং আরও একজনকে জখম করে মোটর সাইকেলে করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের ওয়েবসাইট ও টুইটার একাউন্টে এক বার্তায় বলা হয়, “বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যার দায় স্বীকার করেছে আইএস।”
ঠিক কোন তথ্যের ভিত্তিতে আইএসএর দায় স্বীকারের বিষয়ে সাইট নিশ্চিত হল, সে বিষয়ে এবারও কিছু বলা হয়নি তাদের খবরে।
এর আগে ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক চেজার তাভেল্লা ও রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশিও কুনি খুন হওয়ার পরও আইএসের দায় স্বীকারের খবর দিয়েছিল সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।
এরপর পুরান ঢাকার ইমামবাড়ায় আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির মধ্যে বোমা হামলায় দুইজন নিহত হওয়ার ঘটনাতেও আইএস দায় স্বীকার করেছে বলে সাইট দাবি করে।
সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর এক প্রকাশককে হত্যা এবং আরেক প্রকাশকসহ তিনজনকে হত্যা চেষ্টার পর আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার নামে দায় স্বীকার করা হয়, যে খবর সাইটেও আসে।
বাংলাদেশ সরকার বলে আসছে, এসব ঘটনার সঙ্গে আইএস বা এ ধরনের কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা বা দায় স্বীকারের দাবির কোনো ভিত্তি গোয়েন্দারা খুঁজে পাননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, বিদেশি হত্যার ক্ষেত্রে আইএসের নামে যে টুইট করা হয়েছে তা এসেছে বাংলাদেশ থেকেই।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মুনিরুল গত ২৬ অক্টোবর এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, তাভেল্লা হত্যার বিষয়ে কোনো তথ্য আইএসের ওয়েবসাইটে নেই। ‘এসব বার্তা’ তারা কখনো গোপনেও দেয় না।
“এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সাইট ইন্টিলিজেন্সের পরিচালক রিটা কাতজের সঙ্গে মেইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কোনো উত্তর আমরা পাইনি।”
“এসব হামলার ঘটনায় আইএস-এর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার তীব্রভাবে অস্বীকার করে আসছে। আর আইএস-এর দাবির বিষয়টি আড়ালে রাখার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে সরকার এখন সাইটের সুনাম ক্ষুণ্নের চেষ্টা করছে।”
সাইটের ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘যারা সতর্ক করছে’ তাদের বিরুদ্ধে না গিয়ে ‘সত্যের মুখোমুখি হয়ে ’ আসল শত্রুদের দিকে মনোযোগ দিলেই বাংলাদেশ সরকার বেশি ‘সুফল পাবে’।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সাভারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নুরুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব আছে বলে আমার মনে হয় না।”
কারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত জানতে চাইলে তিনি বলেন, “১৯৭১ ও ২০১৩-১৪ সালের ঘাতকরাই এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।”