পুরান ঢাকার হোসাইনী দালান ইমামবাড়ায় বোমা হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়ের আসামিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেছে পুলিশ।
Published : 25 Oct 2015, 12:43 PM
ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার মো. মফিজউদ্দিন আহমেদ জানান, রোববার দুপুরে চকবাজার থানার এস আই জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে এই মামলা করেন।
মামলাটি তদন্তের জন্য ডিবিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
আশুরা উপলক্ষে নাজিম উদ্দিন রোডে হোসাইনী দালানে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় শনিবার প্রথম প্রহরে বোমা হামলার ওই ঘটনায় এক কিশোর নিহত হয়, আহত হয় শতাধিক।
আশুরা উপলক্ষে প্রতিবছর শিয়া মুসলমানরা তাজিয়া মিছিল বের করে। এই ধরনের হামলা বাংলাদেশে এটাই প্রথম।
এদিকে দুপুরে হোসাইনী দালান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ বৈঠক করেছেন।
নিরাপত্তা বাড়াতে দালান কর্তৃপক্ষকে হোসাইনী দালানের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া, ডিজিটাল চেকপোস্ট, মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশ এই নিয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মুনতাসিরুল।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিরাজমান সংহতি বিনষ্ট করা এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার লক্ষ্যে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের পরিকল্পনা এবং ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
তাজিয়া মিছিলের আগে তিনটি হাতে তৈরি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে র্যাব-পুলিশ জানিয়েছে। এছাড়া দুটি অবিস্ফোরিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
মামলায় বলা হয়, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর একটি অংশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিস্ফোরণ ঘটায় এবং তাদের অন্য একটি অংশ ঘটনার সংঘটনে আর্থিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার সঞ্জিত কুমার রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওইদিন ঘটনার পরপরই তারা তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের হাতে দিয়েছিলেন। এরপর আর কাউকে আটক করার কথা তার জানা নেই।
এজাহার অনুযায়ী, ওই বিস্ফোরণে আহতের সংখ্যা ১১৫ জন। এদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৬ জন আর মিটফোর্ড হাসপাতালে ৩৯ জন চিকিৎসা নেন। বিস্ফোরণে মো. ইয়াসিন আলী নামে পুলিশের এক কনস্টেবলও আহত হন।
পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক ইতোমধ্যে বলেছেন, শিয়াদের তাজিয়া মিছিলের উপর হামলার সঙ্গে দুদিন আগে গাবতলীতে এএসআই খুনের যোগসূত্র রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
গত বৃহস্পতিবার গাবতলীতে পুলিশের একটি তল্লাশি চৌকিতে ছুরিকাঘাতে নিহত হন এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা। তখন ঘটনাস্থল থেকে মাসুদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তার দেওয়া তথ্যে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধারের কথা শুক্রবার জানিয়েছিল পুলিশ। আইজিপি বলছেন, কামরাঙ্গীরচরে পাওয়া বিস্ফোরক এবং ইমামবাড়ার বিস্ফোরকে মিল আছে।
নাজিম উদ্দিন রোডের হোসাইনী দালান থেকে প্রতিবছর আশুরার তাজিয়া মিছিল বের হয়। এর ব্যবস্থাপনায় থাকে ‘হোসাইনী দালান ইমামবাড়া’।
ওই এলাকায় থাকা ৩২টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ধারণ করা ছবি থেকে হামলাকারীদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে বলে পুলিশ আশা করছে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এই হামলার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করছে। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকারের এই ধরনের বক্তব্যে পার পেয়ে যাবে মূল অপরাধীরা।