ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক খুনের এক সপ্তাহের মধ্যে রংপুরে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হয়েছেন জাপানের এক নাগরিক।
Published : 03 Oct 2015, 11:22 AM
ঢাকায় কূটনীতিক পাড়ায় ইতালির চেজারে তাভেল্লার খুনিদের মতোই রংপুরের পল্লীতে কুনিও হোশিকে হত্যা করতে দুর্বৃত্তরা এসেছিল মোটরসাইকেলে।
জাপানি নাগরিক কুনিওর খুনিরা মুখোশপরা ছিল বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন রংপুরের পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক।
শনিবার বেলা ১১টার কিছুক্ষণ আগে কাউনিয়া উপজেলার আলুটারি মহিষওয়ালা মোড়ে কুনিও দুর্বৃত্তের কবলে পড়েন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
রংপুর শহরের মুন্সীপাড়ার স্থানীয় একটি পরিবারের দুই ভাই জাপানে থাকেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে কুনিও আলুটারি গ্রামে একটি ঘাসের খামার করছিলেন।
সেখানে যাওয়ার পথে তিনি হামলার শিকার হন। কারা কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।
কাউনিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুর্বৃত্তরা মোটর সাইকেলে এসে তাকে তিনটি গুলি করে। একটি গুলি তার বুকে, একটি ডান হাতে এবং আরেকটি কাঁধে বিদ্ধ হয়।”
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেল্লাও হাঁটার সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। সেক্ষেত্রেও খুনিরা মোটর সাইকেলে এসেছিল বলে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।
বাংলাদেশে চলাচলে নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর সতর্কতা জারির মধ্যে তাভেল্লা হত্যাকাণ্ড ঘটে। তা নিয়ে আলোচনার মধ্যে খুন হলেন জাপানি নাগরিক।
কুনিও হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করেছে। তারা হলেন- ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির খোকা মিয়ার ছেলে মুরাদ হোসেন (৩৮) এবং রিকশাচালক মুন্নাফ আলী (৩৫)।
রংপুরের পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, কুনিও এবছর মে মাসে বাংলাদেশে আসেন। তিনি আলুটারি গ্রামের শাহ আলমের জমি ইজারা নিয়ে একটি ঘাসের খামার করেছেন।
রংপুর শহরের মুন্সীপাড়ার জাকারিয়া বালা নামে এক জনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন এই জাপানি। তার দুই ভাই জাপানে থাকেন, যাদের মাধ্যমে কুনিওর বাংলাদেশে আসা এবং খামার ইজারা নেওয়া।
জাকারিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “আমি নিজেও দীর্ঘদিন জাপানে ছিলাম। আমার পরিবারের অনেকে এখনও জাপানে থাকেন। সেই সূত্রে হোশি রংপুরে এসে আমার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তিনি একাই থাকতেন।”
কুনিও আলুটারি গ্রামে দুই একর জমিতে ঘাস আবাদ করছিলেন বলে জানান তিনি।
পুলিশ সুপার রাজ্জাক বলেন, মুন্নাফের রিকশায় প্রতিদিন সকালে শহর থেকে খামারে যেতেন কুনিও।
রিকশাচালককে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “কুনিও আজ সকালেও রিকশায় করে মাহিগঞ্জ-হারাগাছা সড়ক থেকে একটি কাঁচা রাস্তা ধরে ৫০০ গজ দূরের নিজের ইজারা নেওয়া খামারের দিকে যাচ্ছিলেন। মাঝ পথে আলুটারি মহিষওয়ালা মোড়ে সড়কের পাশে দাঁড় করানো একটি মোটরসাইকেলে এক মুখোশধারী বসা ছিল। আর সামনের দিক থেকে আসে আরও দুই মুখোশধারী।
“তারা কুনিওকে গুলি করে দ্রুত দৌড়ে মোটর সাইকেলে উঠে পালিয়ে যায়। পরে পাশের বাড়ি থেকে মুরাদ বের হয়ে কনিওকে একটি অটোরিকশায় তুলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।”
রিকশাচালক জানিয়েছেন, মুন্সীপাড়ার হিরা (জাকারিয়ার শ্যালক) নামে একজন প্রতিদিন এই জাপানির সঙ্গে রিকশায় এলেও শনিবার তিনি আসেননি।
হীরা সাংবাদিকদের বলেন, “আমার জরুরি কাজ থাকায় হোশি একাই খামারে গিয়েছিলেন।”
কুনিওর সঙ্গে থাকা পাসপোর্টটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বয়স ৬৬ বছর। তার ভিসার মেয়াদ রয়েছে ২০১৬ সালের ৩১ মে পর্যন্ত।
রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাল্টিপল ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসেন কুনিও। একটি প্রজেক্ট তৈরি করে ফান্ড গঠনে সহায়তা করছিলেন তিনি।”
তিনি বলেন, গত ২৮ অগাস্ট সর্বশেষ বাংলাদেশে আসেন এই জাপানি নাগরিক। তবে তার অবস্থানের ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে কিছু জানানো হয়নি।
জাপানি এই নাগরিকের মৃতদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার ছাড়াও জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার ও র্যাব-১৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কিসমৎ হায়াত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যদের তৎপর দেখা যায়।
পিবিআই প্রধান উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এই ঘটনাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। স্থানীয়ভাবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। তবে টেকনিক্যাল বিষয়ে ঢাকা থেকে সরাসরি সহায়তা করা হচ্ছে।”